Table of Contents
Toggleআমলকী খান আর শরীরের পরিবর্তন নিজেই দেখুন
আমলকীর গাছ ৮-১৮ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট হতে পারে। এই গাছ পাতা ঝরা প্রকৃতির। এর পাতা গুলো হালকা সবুজ, যৌগিক পত্রের পত্রক ছোট, ১ অথবা ২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। হালকা সবুজ রঙের স্ত্রী ও পুরুষ ফুল একই গাছে ধরে। ফল গুলো হালকা সবুজ বা হলুদ রঙের এবং গোলাকৃতির ব্যাস ১/২ ইঞ্চির কম অথবা বেশি হয়ে থাকে।
এই গাছের কাঠ বাদামী লাল বা অনুজ্জ্বল লাল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই আমলকী গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ৪ অথবা ৫ বছর বয়সে এই গাছে ফল ধরা শুরু করে। বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বীজ দিয়ে ফলের বংশবিস্তার করা যায়। চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকালে।
প্রায় সারাদেশে আমলকী গাছ দেখতে পাওয়া যেতে পারে। এই গাছ প্রধানত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে চাষ করা হয়ে থাকে। উদ্যান, পার্ক, বাগান, প্রাকৃতিক অরণ্য প্রভৃতি স্থানে এই গাছগুলোর চারা রোপণ করা হয়।
আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম
আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica। এই ফল ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস গণের একপ্রকার ভেষজ ফল।
আমলকীর ঔষধি গুণাগুণ
আমলকী ভিটামিন সি যুক্ত একটি বহু গুণ সম্পন্ন ফল। আজ আমরা জানবো এর ঔষধি গুণ সম্পর্কে-
- বমি বন্ধ করতে আমলকী কার্যকরী।
- যারা দীর্ঘদিন ধরে সর্দি কাশিতে ভুগছেন। এর থেকে মুক্তি পেতে আমলকীর নির্যাস খেতে পারেন। অনেক উপকারী।
- এই ফল ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখে।
- খাবারের প্রতি রুচি বাড়ায়।
- যারা বহু মূত্র রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য উপকারী ফল।
- চোখ উঠলে কাঁচা অবস্থায় আমলকীর রস করে ২ ফোঁটা করে দিনে দুইবার দিলে আরাম পাওয়া যায়।
আমলকী খাওয়ার নিয়ম
আমলকী কাঁচা ও শুকনো দুই ভাবেই খাওয়া যায়।
তাহলে জেনে নিই শুকনো আমলকী খাওয়ার উপকারিতা-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
শুকনো আমলকী তে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, যেটার মাধ্যমে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করা হয়। করোনা ভাইরাস চলাকালীন সকলকে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিলো। সেই সময় সবাই ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া শুরু করেছিলো। ঋতু পরিবর্তনের সময় ফল তো আর পাওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে এই শুকিয়ে সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়।
নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পেতে
অনেক সময় আমাদের মধ্যে কিছু মানুষের কথা বলার সময় নিঃশ্বাসের সাথে মুখের দুর্গন্ধ বের হয়, যেটা খুবই অস্বস্তিকর। শুকনো আমলকী চিবাতে থাকেন। এটি মাউথওয়াশ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
হজমের জন্য
অনেকে পেট জ্বালাপোড়া, বুক জ্বালাপোড়া, অম্লত্ব, পেট ফাঁপা সমস্যায় ভুগছেন। তারা শুকনো আমলকী পানিতে ভালো মতো ফুটিয়ে নিয়ে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
এবার জেনে নিই কাঁচা আমলকী খাওয়ার উপকারিতা-
দাঁতের মাড়ি ও নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ:
নিয়মিত কাঁচা আমলকী খাওয়া দাঁত ও মাড়ির জন্য অনেক উপকারী। এর সাথে নিঃশ্বাসের সাথে যে দুর্গন্ধ বের হয়, তা দূর করতেও কাঁচা আমলকী উপকারী।
হজম প্রক্রিয়া:
আমলকী আঁশ যুক্ত একটি ফল। পরিপাকতন্ত্র কে সুস্থ রাখতে কাঁচা আমলকী অনেক উপকারী। একটা সুস্থ পরিপাকতন্ত্র আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে, দেহকে শক্তিশালী করে তুলে।
হৃদরোগ:
কাঁচা আমলকী নিয়মিত সেবন করলে হৃদরোগ থেকে উপশম পাওয়া যায় এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা সমাধান হয়।
জয়েন্টের ব্যথা:
আমলকী তে ক্যালসিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। যেটা হাড় মজবুত করতে কার্যকরী। জয়েন্টের ব্যথা, আর্থ্রাইটিসের, অস্টিওপরোসিসের সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ত্বকের জন্য:
আমলকী রক্ত বিশুদ্ধকরণের জন্য কার্যকরী। নিয়মিত আমলকী খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। রক্ত পরিষ্কার হলে ত্বকে ব্রণের উপদ্রব দেখা যাবে না। আর ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে।
চুলের যত্নে:
আমলকী তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। চুলকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে কাজ করে।
আমলকীর উপকারিতা
চলুন জেনে নিই আমলকীর উপকারিতা সম্পর্কে-
হজমের সমস্যা সমাধান:
শুকনো আমলকী আধা চূর্ণ করে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতাকরণে:
আমলকীর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে পারেন। ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
চোখের বিভিন্ন সমস্যায়:
চোখের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। যেমন- চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের প্রদাহ, চোখ চুলকানি। প্রতিদিন আমলকী খেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
মুখের রুচি বৃদ্ধিকরণে:
আমলকী টক তিতা যুক্ত ফল। পানি খাওয়ার পর মিষ্টি স্বাদযুক্ত পাওয়া যায়। এজন্য মুখের রুচি কমে গেলে এই ফল খেলে রুচি ফিরে পাবেন৷ আমলকীর গুড়োর সঙ্গে মধু ও মাখন মিশিয়ে খেতে পারেন, এতে করে রুচি ও খিদে বাড়বে।
বিভিন্ন রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য:
বিভিন্ন রোগ যেমন: ব্রঙ্কাইটিস, এ্যাজমা ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তির জন্য খাবারের তালিকায় প্রতিদিন আমলকী রাখতে পারেন।
মেদ কমাতে আমলকী:
শরীরে মেদ কমানোর জন্য অনেকে অনেক ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকেন। এগুলো ঔষধ না খেয়ে আমলকী খেতে পারেন।
নতুন চুল গজাতে আমলকি
চুলের যাবতীয় সমস্যার জন্য আমলকীর জুড়ি ভার মেলা। যেভাবে আমলকী চুলের যত্নে সাহায্য করে থাকে
চুল পড়া কমায়-
প্রতিদিন ১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু এর থেকে বেশি পরিমাণে চুল পড়তে থাকলে, সেটা আমাদের অনেক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমলকীর রস চুল পড়া কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে।
চুল মজবুত করে তুলে-
ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের জন্য অনেক অপরিহার্য। আর এই আমলকী তে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। কাঁচা আমলকী প্রতিদিন খেলে চুলের গোড়া মজবুত হবে। এমনকি এই রস নিয়মিত মাথার ত্বকে মাখলে চুলের গোড়া মজবুত হবে।
নতুন চুল গজাতে-
আমলকীতে থাকা নিউট্রিয়েন্টস মাথায় যে কোলাজেন তৈরি করে থাকে, সেটা ফলিকল বা নতুন কোষ তৈরি করতে বিশেষ ভাবে কাজ করে থাকে।
অকালে চুল পাকা-
যাদের কম বয়সে চুল পাকা সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় আমলকী রাখবেন। আমলকী চুল পাকা রোধ করে। পাশাপাশি মাথায় দিতে পারেন।
মাথার ত্বক পরিষ্কার-
মাথার ত্বক পরিষ্কার না থাকলে মাথায় নতুন চুল গজাবে না। আর এই খুশকির জন্য মাথার ত্বক অপরিষ্কার থাকে। খুশকি রোধের জন্য আমলকী রস মাথায় দিতে পারেন নিয়মিত। এতে মাথার আর্দ্রতা ধরে রাখবে এবং খুশকি রোধে সাহায্য করবে।
অতিরিক্ত আমলকী খেলে কি হয়
চুল ও ত্বকের জন্য আমলকী অনেক উপকারী। তবে উপকারী ফলটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। সেটাতে উপকারের পরিবর্তে অপকার হতে পারে।
আমলকী খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে-
কিডনিতে পাথর:
আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট আছে। আমলকী বেশি পরিমাণে খেলে কিডনিতে পাথর তৈরি করে। সেজন্য বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।
হজমের সমস্যা:
হজমের জন্য অনেকে আমলকী খেয়ে থাকেন। যতটুকু পরিমাণ খাওয়া দরকার, তার থেকে বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, এসিডিটি ও বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য অতিরিক্ত এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া:
শরীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ একদম বেড়ে যাওয়া এবং একদম কমে যাওয়া দুইটাই বিপজ্জনক। আমলকী রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। কিন্তু প্রতিদিন যদি বেশি পরিমাণে আমলকী খেতে থাকেন, তাহলে রক্তে শর্করার পরিমাণ একদম কমে গিয়ে আরো সমস্যা দেখা দিবে। তাই বেশি না খাওয়াই ভালো।
রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়া:
আমলকীতে রয়েছে অ্যান্টিপ্লেটলেট। যেটা রক্ত পাতলা করতে সহায়ক এবং রক্ত জমাট বাঁধা আশঙ্কা কমায়। তবে যাদের রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়া সমস্যা রয়েছে, তাদের আমলকী না খাওয়াই ভালো। আমলকী খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যেকে পারে। যদি সামান্য কাটা ছেড়াতেও রক্ত বন্ধ করতে অসুবিধা হয়।
দাঁতের সমস্যা:
আমলকীর টকভাবের কারণে দাঁতের এনামেলের ক্ষয় ঘটতে পারে। এর ফলে সেনসিটিভিটি ও ক্যাভিটির মতো সমস্যা দেখা দেয়। কাঁচা আমলকী খাওয়ার পর পরই পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হব। যাদের এমন সমস্যা তারা শুকনো আমলকী খেতে পারেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১। প্রতিদিন কয়টা আমলকী খাওয়া উচিত?
উত্তর: আমলকী প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১-২ টি খাওয়া যায়। এর বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
২। আমলকী খাওয়ার পর পানি খেলে মিষ্টি লাগে কেন?
উত্তর: আমলকী তে রয়েছে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (ভিটামিন সি) এবং অন্য কিছু জৈব অ্যাসিড। এটাতে অ্যাসিডিটি বা পিএইচ মাত্রা কম থাকার কারণে ফল খাওয়ার পর পানি খেলে অ্যাসিডের প্রভাব হালকা হয়ে যায় বলে একটু মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়।
৩। আমলকী কিভাবে খেতে হয়?
উত্তর: আমলকী কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। অনেকে আবার রোদে শুকিয়ে সারাবছরের জন্য শুকনো আমলকী সংরক্ষণ করে রাখেন।
শেষ কথা
আমলকীতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। যেটা আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী। এই ফল সর্দি, কাশি, ঠান্ডা সহ বিভিন্ন রকমের ভাইরাল সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। মূলত চুল ও ত্বকের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এটা ছাড়াও এর আরো ব্যবহার রয়েছে, সেগুলো আর্টিকেল টিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনারা পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আমলকী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
Read More:
- পেঁয়াজের উপকারিতা
- কালো জিরার উপকারিতা | টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
- তেজপাতার উপকারিতা
- বেদানা বিশেষজ্ঞদের মতে প্রথম সারির ফল যা পুষ্টিতে সমৃদ্ধ
এলার্জি রোগের ইংরেজি নাম হল হাইপারসেনসিটিভিটি। এলার্জি রোগীদের অতি সংবেদনশীলতার রোগী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। যে ব্যক্তি যে ধরনের এলার্জি Read more
রক্তে এলার্জি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার Read more
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের মুখে ব্রণ একটি কমন সমস্যা। পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে অবস্থান করেন। বাইরে ধুলাবালি মুখে ব্রণ তৈরি Read more
বদহজম খুবই স্বাভাবিক এবং প্রচলিত একটি সমস্যা। বদহজমের সমস্যা হয় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই Read more
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা রসুনে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। বিভিন্ন ভিটামিন থেকে শুরু করে বায়োএকটিভ যৌগ যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য Read more
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম হল সিজিজিওমোরোমেটাম। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ গাছে Read more