লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় 

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় 

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় অনেকের কাছেই পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি  উপায়। যেমন  সকালে খালি পেটে লেবুপানি পান করা। লেবু ও পানি দুটো উপাদান আলাদাভাবে শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু এই দুটো উপাদান একসঙ্গে কি আসলেই ততটা উপকারী, যতটা মনে করা হয়? লেবুর রস মেশানো পানি স্বাদে ও গুণে শরবত হিসেবে চমৎকার। এটি পাকস্থলি ও অন্ত্রের অন্যান্য অংশ থেকে পাকরস তৈরিকে ত্বরান্বিত করে। পেটফাঁপা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমিয়ে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ভারী খাবার খাওয়ার পর কোমল পানীয়র পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন লেবুপানি। মূলত লেবুর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এই ভিটামিন শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয় বা ডিটক্সিফাই করে।লেবুর পানিতে খুব কম পরিমাণ ক্যালোরি থাকে। এ কারণে আপনি কোমল পানীয় বাদ দিয়ে যদি লেবু পানি পান করা যায়, তাহলে ওজন কমানো সহজ হয়।

 

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় অনেকে। প্রাকৃতিক উপাদানে ওজন কমানোর মধ্যে লেবু অন্যতম উপাদান। লেবুর ফ্ল্যাভনয়েড উপাদান শরীরের চর্বি ও রেজিস্ট্যান্স কমায়। ফলে রক্তে ও শরীরের চর্বি ও শর্করা মাত্রা কমে আসে। ব্যায়ামের সাথে সহায়ক হিসেবে লেবু আপনার ক্যালরির মাত্রা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। ডায়েট চার্টে লেবুতে থাকা ফাইভারের কারণে আপনার ক্ষুধার মাত্রা কমায়। লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে কয়েকটি আলোচনা করা হল। 

 

  • সবাই লেবুকে চিপে রস বা শরবত বানিয়ে খেয়ে থাকে। এটি একটি সাধারণ পদ্ধতি লেবু খাওয়ার। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য লেবুর এই পানি বানিয়ে খান, এভাবে কাজে দিবে। গরম জ্বলে মধু মিশিয়ে তাতে লেবুর রস মিক্স করে খেতে পারেন। অথবা গরম জল না করে নরমাল পানিতে মধু লেবু মিশিয়েও খেতে পারেন। তবে গরম জলের লেবু পানি ওজন কমাতে শরীরে বেশি কার্যকরী।

 

  • ডিটক্স ওয়াটার এমন একটি পানীয় যাতে সাধারণত ঠান্তা পানিতে উপকারী ফল,সবজি বা হার্বস টুকরো টুকরো করে পানিতে অনেকক্ষণ ডুবিয়ে রেখে এটি তৈরি হয়। লেবু এবং শসার ডিটক্স ওয়াটার শরীরের দূষিত পদার্থ দূর করে এবং মেদ দূর করে। ১ লিটার ঠান্ডা পানিতে একটি লেবু এবং একটি মাঝারি আকারের শসা স্লাইস করে কেটে নিন। সাথে একটু আদা এবং পুদিনা পাতা দিয়ে ২.৫/৩ ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে পিংক সল্ট মিশিয়ে ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করুন। এই ডিটক্স ওয়াটার ফ্যাট সেল গুলো নিষ্কাশন করে, খাবার হজমে সাহায্য করে এবং ব্যায়ামের পরের অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। 

 

  • দ্রুত ওজন কমাতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডায়েট হলো ওয়াটার ফাস্টিং। এই ওয়াটার ফাস্টিং-এ আপনাকে তরল জাতীয় খাবার ব্যতীত অন্য কোন খাবার গ্রহণ করা হতে বিরত থাকতে হবে। ওয়াটার ফাস্টিং-এ পানির সাথে বিভিন্ন ফলের জুস এবং শরবত খাওয়া হয়। ওয়াটার ফাস্টিং-এ উপকারী পানীয় হতে পারে লেবুর শরবত। এটি আপনার দেহের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। 

 

  • আমরা সকালে উঠে অনেকেই চা অথবা কপি পান করতে পছন্দ করি। চা বা কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করি। এর পরিবর্তে আমরা লেবু আদার ন্যাচারাল পানি পান করতে পারি। এতে আমাদের দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে মেদ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও লেবু আদার পানি আপনার শরীরের ডায়েটকালীন অন্যান্য সমস্যা সমাধানে কাজ করে।

 

খালি পেটে লেবু জল খাওয়ার উপকারিতা

অনেক জনপ্রিয় একটি পানীয় হল লেবুপানি। একটি কথার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত যে, স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। সেই স্বাস্থ্যই যখন অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন সেটি অনেক সমস্যাও সৃষ্টি করে। জেনে অবাক হবেন, সেই বড় সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারে খুব সহজ একটি উপাদান। আর সেটি হচ্ছে লেবুপানি। মূলত লেবুপানি আপনার শরীরে আরও বেশি পরিমাণে পানি প্রবেশ করায়। আর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকার স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে অনেক। ওজন কমানোর জন্য লেবুপানির উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হল 

 

  • নিয়মিত লেবুপানি খেলে তা শরীরকে হাইড্রেট থাকতে সহায়তা করে। আর গবেষণা বলছে, হাইড্রেশন শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে।এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শরীরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা শরীরের ফ্যাট দূর করে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

 

  • লেবুপানি বিপাকক্রিয়াকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফলে শরীরের ওজন কমতে পারে আরও দ্রুত।গবেষণায়  দেখা গেছে, বেশি পরিমাণে পনি পান করার ফলে বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে তা ওজন কমাতে সহায়তা করে। আর এ ক্ষেত্রে  বেছে নিতে পারেন লেবুপানিকেও।

 

  • লেবুপানি খেলে তা আপনার ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে। খাবার খাওয়ার আগে লেবুপানি খেলে তা আপনাকে কম খাবার খেতে সহায়তা করবে।

 

  • লেবু পানির ভেতরে যে কেবল ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত থাকে তা নয়, সেই সঙ্গে উপস্থিত থাকে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও কত কী, যা দেহের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে শরীরকে শক্তপোক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

  • ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু পানি খেলে দেহের ভেতরে পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে ভেতর এবং বাইরে থেকে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।

 

  • একটি গবেষণা পত্রে সম্প্রতি প্রকাশিত এমনটা দাবি করা হয়েছে, টিবি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধের সঙ্গে লেবুর মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যদি খাওয়া যায়। তাহলে ওষুধের কর্মক্ষমতা মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগের প্রকোপ কমতে সময়ই লাগে না।

 

  • লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধ করে। এই সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের পাশাপাশি জমে থাকা পাথর বের করতেও সাহায্য করে।

 

  • ঠান্ডা পানি বিপাকে তুলনামূলক বেশি উপকারী। আর লেবুর খোসা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যা বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়ক। তাই ঠান্ডা লেবুর পানিতে কিছুটা লেবুর খোসা কুচি করে মিশিয়ে খেয়ে নিন।



ওজন কমাতে লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা বা কফি চাই। চা-কফি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে দিনের শুরু করতে পারেন লেবুপানি দিয়ে। ৪০০ মিলিলিটার কুসুম গরম পানিতে দুই চা–চামচ লেবুর রস দিয়ে একটু মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ায়। এ কারণে সারা দিনে আপনি যা খান, তা সহজেই হজম হয়ে যায়। খালি পেটে লেবু-পানি-মধু পানে ক্ষুধা কম লাগে। সারা দিনে খাবার কম খাওয়া হয়। শরীরে ক্যালরি কম প্রবেশ করে। এ কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

 

যেভাবে পান করবেন

  • সকালে নাশতা করার অন্তত ৩০ মিনিট আগে লেবুপানি পান করুন। ক্যাফেইন আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। চা-কফির পরিবর্তেও লেবুপানি ভালো। এটি পানিশূন্যতা দূর করে। তবে দিনে দুইবারের বেশি লেবুপানি পান করবেন না।
  • লেবুপানির সঙ্গে কিছুটা মধু মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা কম লাগে। এ কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রবেশ করতে পারে না।
  • লেবুপানিতে অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকায় দাঁতের অ্যানামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই পান করার পর ভালোভাবে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
  • অ্যাসিডিটি হলে পান করা বাদ দিন।

 

সকালে লেবুর পানি পান করার অপকারিতা

ওজন কমাতে গরম পানিতে লেবু খেলে উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গরম পানিতে লেবু খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, ক্ষুধামন্দা, বমিসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যখন ঘুম থেকে জেগে উঠি, তখন আমাদের দেহের টক্সিন থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং সেইসাথে আমাদের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য হাইড্রেশন প্রয়োজন হয়ে থাকে। আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যে লেবুর রসের ব্যবহার যেন বেশি না হয় কারণ এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। লেবু গরম পানি পান করার কারণে আপনার পেট খারাপ করতে পারে। এটি অধিক পানে বা ব্যবহারে আপনার পেট খারাপ করতে পারে এবং এমনকি আপনার গ্যাস্ট্রো জটিলতাকে সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে ।

 

বহুল জিঙ্গাসিত প্রশ্ন 

 

ওজন কমাতে লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত?

সকালে লেবু ও উষ্ণ জল পান করা, ওজন কমানোর জন্য ভাল। 

লেবু পানি খেলে কি পেটের চর্বি কমে?

ক্যালরি সমৃদ্ধ পানীয় পান করার পরিবর্তে লেবু দিয়ে গরম জল পান করে।  তাহলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

লেবু শরীরে কি উপকার করে?

লেবুতে প্রায় 50 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা আপনার প্রতিদিনের খাবারে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর অর্ধেকের বেশি। ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। 

গরম পানি ও লেবু খেলে কি হয়?

গরম লেবু জল ঘুমের আগে শিথিল হতে পারে, যা ঘুমের জন্য সাহায্য করতে পারে। এটি সাধারণ হাইড্রেশনের সাথেও সাহায্য করতে পারে। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

লেবু পানি খেলে কি চিনি বের হয়?

লেবুর জল আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে না এবং এটি কমিয়ে আনতে পারে , তবে এটি অবশ্যই অসময়ে স্পাইক প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। 

 

উপসংহার

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় গুণ সহ, লেবু একটি অতি পরিচিত মুখ আমাদের রান্নার উপকরণে। এটি রান্নার স্বাদ বাড়াতে বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। তবে লেবুর পরিমিত ব্যবহারে এটি দেহের স্বাস্থ্য উপকারে আসে। অতিরিক্ত মেদ কমাতে লেবু একটি সহায়ক ভুমিকা পালন করে। শুধু লেবু খেলেই যে মেদ কমে যাবে এমনটা সত্য নয়। অবশ্যই দৈনন্দিন ব্যায়াম এবং ডায়েট চার্টের সাথে লেবুকে রাখলে এবং নিজের ওজন কমানোটা আরো সহজ হবে।

 

Read More:

  1. আমলকী খান আর শরীরের পরিবর্তন নিজেই দেখুন
  2. পেঁয়াজের উপকারিতা
  3. খাঁটি মধু চেনার উপায়
  4. বেদানা বিশেষজ্ঞদের মতে প্রথম সারির ফল যা পুষ্টিতে সমৃদ্ধ
  5. কমলা খাওয়ার উপকারিতা

Leave a Comment