Table of Contents
Toggleচা পাতা
চা পাতা নামটি শুনলেই যেন মন-মস্তিষ্কে সতেজ অনুভব হয়। কেননা বেশিরভাগ মানুষের প্রতিটি কাজের উদ্দীপনার শুরুতে চা পান একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। চা পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া দুরূহ ব্যাপার।
চা একটি সুগন্ধিযুক্ত এবং স্বাদযুক্ত পানীয়। চা চিরসবুজ উদ্ভিদ। এটি শুকনো পাতা থেকে হয়। এটি খুবই জনপ্রিয় পানীয়। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে অথবা একটি সুন্দর প্রভাতের শুরুতে চা ছাড়া খুব একটা চলে না।
তবে অনেকেই মনে করেন চা পান করা শুধু একটি অভ্যাস। এটির আসলে তেমন কোন উপকারিতা নেই। তবে এটি পুরোপুরি সত্য নয়। চলুন জেনে নেই চা সম্পর্কে অজানা তথ্য। আশা করি আজ এই আর্টিকেলের জার্নিটি আপনাদের সঙ্গে ভালো কাটবে।
চা পাতার উপকারিতা
চা পাতা শুধু আমাদের সতেজ অনুভব করায় না বরং অজান্তেই আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে থাকে। যেহেতু এটি আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী তাই এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুনাগুন সবকিছু নকদর্পনে থাকা উচিত। চলুন জেনে নিই চা পাতার উপকারিতা গুলি-
হার্ট ভালো থাকে
হার্ট ভালো রাখতে প্রতিদিন এক কাপ চা আপনাকে সহায়তা করবে। কারণ লিকার চায়ের কিছু এনজাইম থাকে যা হাটে রক্তের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। এতে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। বিশেষজ্ঞরা দিনে দুইবার লিটার চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মাইগ্রেন কমায়
অনেকেই মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন। যা খুব দীর্ঘমেয়াদী একটি সমস্যা। তাই খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে মাইগ্রেন রোগীদের একটু সতর্ক থাকা উচিত। কেননা কিছু খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে আবার কিছু সমস্যাকে প্রশমিত করে। এমনই একটি চা হলো ল্যাভেন্ডার যা। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা খেলে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। ফলে আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা কমে।
নার্ভ শান্ত রাখে
যারা অনেক মানসিক চাপ নেন অথবা মানসিক চাপে থাকেন তাদের জন্য যা হতে পারে একটি দুর্দান্ত উপায়। কেননা চা খেলে নার্ভ শান্ত থাকে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে। তাই নার্ভ শান্ত রাখতে নিয়মিত চা পান করলে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি অনেকটাই দূরীভূত হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে আপনি যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন না। চায় বিদ্যমান ভিটামিন আপনার রূপ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়া চা পানের মাধ্যমে অনেক অসুখ দূর হয়ে থাকে।
উপরোক্ত উপকারিতাগুলি আপনি চা পানের মাধ্যমে পাবেন। যেহেতু চা আমাদের জীবনের নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে তাই বিভিন্ন চায়ের গুণাবলী সম্পর্কেও জানা উচিত।
চলুন বিভিন্ন চায়ের গুণাবলী সম্পর্কে জেনে নিই-
আদা চা এর উপকারিতা
সর্দি-কাশির সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। আবার অনেকের সারা বছরই সর্দি কাশি লেগে থাকে। চা পাতা তাদের জন্য ওষুধের বিকল্প হতে পারে তবে অবশ্যই আদা চা। এছাড়াও আদা চা এর উপকারিতা অনেক। পানির মাধ্যমে আপনার হজম সমস্যা দূর হবে।
রং চা এর উপকারিতা
ক্লান্তি দূর করতে লাল চায়ের কোন তুলনা নেই। এর মধ্যে রয়েছে ট্যানিন যা ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু বা অন্ত্রের প্রদাহ হতে প্রতিরোধ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং শরীরকে প্রাণবন্ত রাখবে।
দুধ চা
দুধ চা যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনি ফুরফুরে মেজাজ পরিবর্তনের সহায়ক। নিয়মিত চা পানে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
গ্রিন টি
প্রথমত গ্রিন টি ওষুধ বলেই পরিচিত ছিল কিন্তু এখন জনপ্রিয় পানীয়তে পরিণত হয়েছে। শরীর ফিট রাখতে গ্রিন টি পান করছেন অনেকে। এই সবুজ চায়ে রয়েছে ভিটামিন এ ই সি ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম ছাড়াও অন্যান্য খনিজ উপাদান যা শরীরের জন্য প্রয়োজন। নিয়মিত গ্রিন টি পানে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে। এছাড়াও কিডনির জন্য এটি বেশ উপকারী। আবার হার্ট অ্যাটাকের ঠকিয়ে অনেকখানি কমায়। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। আবার কোন পোকামাকড় কামড়ালে ওই জায়গা ফুলে গেলে বা চুলকালে গ্রিন টি লাগালে আরামবোধ হবে।
গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে লাল চা পাতা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মুখের ক্যান্সার দূর হতে সহায়তা করে। এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলি দাঁতের ক্ষয় উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ফ্লোরাইড যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। লাল চায়ে আরো রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রেক্টাল যা ফুসফুস, জরায়ুর ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
সুস্বাস্থ্যে চা-এর ব্যবহার
প্রতিটি জিনিস নিয়মমাফিক মেনে খেতে হয়। কেননা অতিরিক্ত কোন কিছুই আপনার জীবনে আশীর্বাদ বয়ে আনবে না। ঠিক একইভাবে অতিরিক্ত চা খেলে খারাপ প্রভাব পড়বে আপনার শরীরে। অতিরিক্ত চা খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলি হলো-
- চায়ের মধ্যে বিদ্যমান থিওফাইলিন নামে একটি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা শরীরে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং হজমের সমস্যা করতে পারে।
- গর্ভবতী নারীরা অবশ্যই জাপান এড়িয়ে চলবেন। কেন না চাতে রয়েছে ক্যাফিন যা ভ্রুনের বিকাশে বাধা দিতে পারে।
- চায়ের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটি অতিরিক্ত পানে প্রস্টেট ক্যান্সার হতে পারে। গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে যারা চা পান করে এবং যারা করে না তাদের মধ্যে যারা অতিরিক্ত চা পান করেছে তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এছাড়াও অতিরিক্ত চা পাতা খেলে হৃদপিন্ডে খারাপ প্রভাব ফেলে। কেননা চায়ে বিদ্যমান রয়েছে ক্যাফেইন।
উপরোক্ত অপকারিতাগুলি অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে আমরা যারা চা পান করতে অনেক ভালোবাসি। অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা।
চা সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা
চা পান নিয়ে আমাদের অনেকেরই ভুল ভাবনা রয়েছে। যেমন চা খেলে লিভারের ক্ষতি হয়, রাতে ঘুম আসে না, চামড়া কালো হয়ে যায় ইত্যাদি। চা খেলে গায়ের রং পরিবর্তন বা কালো হয় না। কেননা গায়ের রং নির্ভর করে কোষ ম্যালানোসাইট কোষ এর সক্রিয়তার উপরে। চা পানে লিভারেরও কোন প্রকার ক্ষতি হয় না। তবে একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত চা পান আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য ও অবসাদে ভুলতে পারেন।
চা পানের সঠিক সময়
সঠিক সময়ে চা পান না করলে আপনার শরীরে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আবার কিছু উপকারিতা করলেও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করতে পারে এবং হজমে বাধা দিতে পারে। হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পান করা উচিত না। এতে যে সমস্যাগুলি হতে পারে-
- চা পাতা শরীরের ভিটামিন বি বা থায়ামিন রোধ করে যেখান থেকে বেরিবেরি রোগ হতে পারে।
- চা খাবার হতে ভিটামিন ও আমি শোষণ করে এবং শরীর এই খাবারগুলি হজম করতে পারেনা।
তাই আপনার জন্য সঠিক হবে সঠিক সময় এবং সঠিক নিয়ম মেনে চা পান করা। তাহলে উপরোক্ত পাশ্ব-প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকবেন।
- অবশ্যই খাবার অন্তত আধাঘন্টা আগে অথবা খাবার খাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা পর চা পান করবেন।
- আর যাদের এসিডিটি বা হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের অবশ্যই সতর্কতার সাথে চা পান করতে হবে।
সঠিক নিয়মে চা পান করলে আপনার শরীরে ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না বরং উপকার লাভ করবে।
রং চা না দুধ চা
চা পাতা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এটি সব সময় বিবেচিত হয়েছে। এটি দেহের কোষের ক্ষয় রোদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভালো? দুধ চা নাকি রং চা বা লাল চা? আপনি যদি নিয়মিত চা পান করেন তবে এটি আপনার জন্য অবশ্যই জানা প্রয়োজন। জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় এর একদল গবেষক পরীক্ষা করেছেন 16 জন নারীকে দিয়ে। তারা প্রথমে তাদের রং চা পান করিয়েছেন আরেকবার দুধ চা পান করতে দিয়েছেন। এরপর প্রতিবারই আউটার সাউন্ড পদ্ধতিতে তাদের রক্তনালীর প্রসারণ মাপা হয়েছে। সেই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে রং চা তাদের রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায়। যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরী। চায় বিদ্যমান ক্যাটেচিন রক্তনালীর প্রসারণ এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অপরদিকে দুধ চা ব্যর্থ হয়েছে রক্তনালীর প্রসারণ ঘটাতে। কারণ দুধের মধ্যে রয়েছে ক্যাসেইন যা চায়ের মধ্যে বিদ্যমান ক্যাটেচিন কে বাধা দেয়। ফলে রক্তনালীর প্রসারণ ক্ষমতা পুরোপুরি চলে যায়। এছাড়াও চায়ের দুধ মেশালে ইনসুলিন নির্গমন এর হার কমে। রংটা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী কিন্তু দুধ চা অতটাও নয়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
লিকার চা এর উপকারিতা?
ক্যান্সার প্রতিরোধে লিকার চা সহায়তা করে।
আদা চা এর উপকারিতা?
অধিক মাত্রায় আদা চা খেলে রক্ত ক্ষরণ হতে পারে ও শরীর দুর্বল লাগতে পারে।
প্রতিদিন দুধ চা খেলে কি হয়?
দুধ চায়ে পাতার পরিমাণ সাধারণত বেশি থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যাফিন থাকার জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এছাড়াও ত্বকে ফুসকুড়িদেখা যেতে পারে।
চিনি ছাড়া চা খাওয়ার উপকারিতা?
আপনি যদি চা খেতে পছন্দ করেন তবে দিনে দুই কাপ গ্রিন টির সঙ্গে লিকার চা খান তবে চিনি ছাড়া। এতে চায়ে থাকা পলিফেনলস টিউমার বৃদ্ধি হতে ব্যাহত করবে। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ভালো।
উপসংহার
চা পাতা এর জনপ্রিয়তা সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে। ছোট থেকে বড় সবাই চা পান করতে পছন্দ করে। সুস্থতায় হোক বা অসুস্থতায়, প্রফুল্ল তাই হোক বা অবসাদে চা যেন আমাদের প্রাণবন্ত করে তোলে। একটি সুন্দর দিনের প্রভাত শুরু হয় সুন্দর একটা চা পানের মাধ্যমে যা আমাদের কাজে উজ্জীবিত করে।
সর্বোপরি আমরা বলতে পারি চায়ের উপকারিতা রয়েছে বেশ। তবে অল্প কিছু উপকারিতাও রয়েছে। কিন্তু সঠিক নিয়ম মেনে চা পান করলে আপনি এর উপকারিতা গুলি উপভোগ করতে পারবেন। এবং আশা করছি আজই আর্টিকেল পড়ে সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন যা আপনাকে সঠিক নিয়মে চা খেতে সহায়তা করবে।