Table of Contents
Toggleকোলেস্টেরল কমাতে লেবু
কোলেস্টেরল হলো এমন একটি পদার্থ যা শারীরিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। তবে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে থাকে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে থাকেন এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা। কিন্তু কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে যা কার্যকরী। লেবু হতে পারে উত্তম একটি সহায়ক। কারণ লেবুতে রয়েছে এমন যৌগ উপাদান যা কোলেস্টেরল কমাতে সক্ষম এবং অন্যান্য শারীরিক সুস্থতা সমুন্নত করতে ভূমিকা রাখে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কোলেস্টেরল কমাতে লেবু কিভাবে কার্যকরী এবং যেভাবে খেলে আপনি একটি উপকারী ফলাফল পাবেন।
কোলেস্টেরল কি
আমরা অনেকেই শুধু বুঝি কোলেস্টেরল উচ্চমাত্রায় থাকা যাবে না তবে এটি দ্বারা ঠিক কি বোঝায় সে সম্পর্কে তেমন ধারণা কারোরই নেই। তাই আজ আগে আমরা জানবো কোলেস্টেরল কি। কোলেস্টেরল হলো রক্তে পাওয়া এমন একটি চর্বিযুক্ত পদার্থ যা শারীরিক কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজন। দুই প্রকারের কোলেস্টেরল আমাদের শরীরে বিদ্যমান থাকে সেগুলি হল- নিম্ন ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (LDL) ও উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (HDL)। এই দুটির মধ্যে এলডিএল কোলেস্টেরলকে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয় যা ধমনীতে জমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ফলক গঠনের দিকে এগোতে পারে। অপরদিকে এইচডিএল কোলেস্টেরলকে ভালো কোলেস্টেরল হিসেবে বিবেচিত করা হয়। কেননা এটি রক্ত প্রবাহ হতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল কমাতে লেবুর শক্তি
লেবু একটি স্বতন্ত্র স্বাদযুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর ফল। বৈজ্ঞানিকভাবে লেবু সাইট্রাস লিমন হিসেবে পরিচিত। কোলেস্টেরল কমাতে লেবুতে রয়েছে অনেক শক্তি। গবেষণা অনুযায়ী প্রতিদিন 24 গ্রাম করে সাইট্রাস ফল অর্থাৎ লেবুর রস ক্রমাগতভাবে এক মাস গ্রহণ করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যাবে।
লেবুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েড। গবেষণা হতে জানা গেছে যে লেবুতে পাওয়া ফ্ল্যাগনয়েড কোলেস্টেরল হ্রাস করতে প্রভাব রাখতে পারে। এছাড়াও লেবুতে ভিটামিন সি উপাদান রয়েছে যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। যা হৃদরোগের সঙ্গে যুক্ত এবং কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক।
লেবুর পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা
লেবু দেখতে সুন্দর সবুজ একটি সহজলভ্য ফল। এর উপকারিতা রয়েছে প্রচুর এবং ক্যালরি রয়েছে কম। লেবু পুষ্টিতে ভরপুর একটি সাইট্রিক ফল। লেবুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার কপার, ভিটামিন বি ৬, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কোলেস্টেরল কমাতে লেবু উপকারী এটা অনেকই জানে। লেবুর পুষ্টিগণ যেমন বেশি তেমনি উপকারিতাও অনেক বেশি। লেবুর উপকারিতা গুলি হল-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হজমের উন্নতি করে
- কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
- কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে কার্যকরী
- অ্যামেনিয়া প্রতিরোধ করে
- ওজন কমাতে সহায়তা করে ইত্যাদি।
লেবুর উপকারিতা গুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
নিয়মিত লেবু খাওয়ার ফলে আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জার্নাল অফ চিরোপ্রাক্টিক গবেষনার মাধ্যমে জানা যায় যে, লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায়। এছাড়াও লেবুর মধ্যে রয়েছে ফ্লেভোনয়েড যা ট্রাইগ্লিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে প্রমাণিত। কি কোলেস্টেরল কমাতে লেবুর ভূমিকা অপরিহার্য।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে
লেবু টক জাতীয় ফল কিন্তু খাবারের রুচি বৃদ্ধিতে লেবুর ভূমিকা অপরিসীম। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কাজ করে। যেকোনো ধরনের ফ্লু এবং সর্দি প্রতিহত করতে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে। আপনি যদি যেকোনো জ্বর বা সর্দিতে আক্রান্ত হন তবে প্রতিদিন এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। লেবু সর্দি-কাশ এবং জ্বর দূর করতে সাহায্য করে।
হজমের উন্নতিতে লেবু
লেবু এক ধরনের সাইট্রাস ফল এতে রয়েছে দ্রবণীয় ফাইবার। যা অন্থে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে হজমে উন্নতি হয়। লেবুতে বিদ্যমান ফাইবার পেকটিন চিনি ও স্টার্চের হজমের হার ত্বরান্বিত করে স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
লেবুতে থাকা ফাইবার আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে তৃপ্ত রাখে এবং বাড়তি খাবার খাওয়া থেকে দূরে রাখে ফলে ওজন বৃদ্ধির সুযোগ থাকে না। এক গ্লাস পানির সঙ্গে লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে পান করবেন এটি আপনার শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে বিস্ময়করভাবে সাহায্য করবে।
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করে
কিডনি সংক্রান্ত আপনার কোন সমস্যা থেকে থাকলে লেবু খেতে পারেন আজ থেকেই। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড যা কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলি থেকে আমরা বলতে পারি যে, শুধু কোলেস্টেরল কমাতে লেবু কার্যকরী নয় বরং অন্যান্য সমস্যা গুলি থেকে শরীরকে সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করতে লেবুর গুনাগুন যেন শেষ হওয়ার নয়। তাই আমরা আপনাকে অভয় দিতে পারি নিয়মিত লেবু খেতে পারে লেবু বান্ধব উপকারের জন্য।
কোলেস্টেরল কমাতে লেবু যেভাবে সাহায্য করতে পারে
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস
লেবুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা এলডিএল বাঘ খারাপ কোলেস্টেরলকে অক্সিডাইস করা হতে আটকাতে সহায়তা করে এবং ধমনীতে প্লেক গঠন করার ঝুঁকি কমিয়ে থাকে।
দ্রবণীয় ফাইবার
দ্রবনীয় ফাইবারের একটি ভালো উৎস হলো লেবু। এটি পরিপাকতন্ত্রের কোলেস্টরলের সঙ্গে আবদ্ধ থাকতে পারে এবং শরীর থেকে রোধ করতে সহায়তা করে।
লিমোনয়েডস
লেবুতে রয়েছে লিমনয়েড যা লিভারে কোলেস্টেরলের সংশ্লেষণকে বাধা দেয় এবং খারাপ কোলেস্টরেলের মাত্রা কমায়।
কোলেস্টেরল কমানোর উপায় কি
কোলেস্টেরল কমানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- নিয়মিত পরিমাণ লেবু খাওয়া
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- অ্যালকোহল ও ধূমপান কে না বলা
- বিভিন্ন ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা
- ওষুধ খাওয়া স্বাস্থ্য সেবা অনুযায়ী
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলেছেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার ভুল-ভ্রান্তি এই সমস্যাগুলির কারণ তাই সঠিক নিয়মে এবং সুশৃংখলপূর্ণ জীবন পারে এই সমস্যাগুলি এড়াতে। তবে প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে কোলেস্টেরল কমাতে লেবু অনন্য ভূমিকা রাখে।
কোলেস্টেরল কমাতে লেবু যেভাবে খেতে পারেন
লেবুর পুষ্টিগণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আমরা অনেক কিছু জেনে ফেলেছি। বিশেষ করে কোলেস্টেরল কমাতে লেবুর ভূমিকা অতুলনীয়। কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না কিভাবে লেবু খেতে হবে। এখন আমরা আলোচনা করব কোলেস্টেরল কমানোর জন্য আপনি যেভাবে লেবু খেতে পারেন-
লেবু পানি
সকালে খালি পেটে অর্ধেক লেবুর সঙ্গে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি মিক্সড করুন এবং পান করুন। আশা করি এই মিশ্রণটি আপনার কোলেস্টেরল কমাতে বন্ধুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সালাদের সাথে
খাবারের সাথে আমরা বিভিন্ন সালাত খাই যেমন টমেটো গাজর শসার মিক্স সালাত বা অন্যান্য ভেষজ খাবার এর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ফেলে খুব ভালো একটি ফল পাওয়া যাবে এবং খাবারের স্বাদ অনেকটা মুখেরোচক হবে।
লেবু স্মুদি
পুষ্টি বৃদ্ধি এবং কোলেস্টেরল কমাতে চাইলে বিভিন্ন ফল এবং খাবারের সঙ্গে লেবুর স্মুদি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার শারীরিক সুস্থতা ও অন্যান্য সমস্যা হতেও মুক্ত করবে।
আশা করা যায় উপরোক্ত নিয়মে প্রাত্যহিকভাবে লেবু খাওয়ার ফলে আপনি কোলেস্টেরল বান্ধব উপকার পাবেন। তবে অবশ্যই এটি আপনার খাবারের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
প্রতিদিন কতটি লেবু খাওয়া নিরাপদ
বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন চার থেকে ছয় টেবিল চামচ বা দুই থেকে তিনটি কোলেস্টেরল কমাতে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পেন আফ্রিকান মেডিকেলের এক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে যে, অতিরিক্ত লেবু খাবার ফলে উচ্চমাত্রার সাইট্রিক এসিডের জন্য এনামেল ক্ষয় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া লেবুতে রয়েছে টাইটামিন যা মাইগ্রেনের রোগীদের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তাই অন্যান্য সকল খাবারের মতো সাইট্রাস ফল পরিমিত পরিমাণ খাওয়া উচিত।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত?
রক্তে যদি খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল এর মাত্রা ১৯০ মিলিগ্রামের বেশি হয় তবে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর যদি ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা ১৫০ মিলিগ্রাম এর নিচে তবে তা স্বাভাবিক। এবং ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম কে বর্ডার লাইন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কোলেস্টেরল কি হৃদরোগের কারণ?
শরীরের সুস্থ কোষের তৈরিতে কোলেস্টেরল প্রয়োজন কিন্তু উচ্চমধ্যার কোলেস্টেরল আবার আপনার শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। কেননা কোলেস্টেরল বেশি হলে রক্তনালীতে চর্বি জমা হতে পারে যা ধমনীতে রক্ত চলাচলে কঠিন করে তোলে। ফলাফল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
লেবু পানি খেলে কি কোলেস্টেরল ভালো হয়?
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে লেবু একটি উপকারী যৌগ। নিয়মিত দুই থেকে তিনটি লেবুর রস পানির সঙ্গে মিক্স করে খেলে আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কম কমাবে এবং হৃদরোগের কমাতে সহায়তা করবে।
৬.৩ কোলেস্টেরল বেশি?
আপনার শরীরে যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা মোট ৫.২ এবং ৬.১ এর মধ্যে থাকে তবে আপনার করোনারী ধমনী রোগের ঝুঁকি বেশি থাকবে। আর যদি কোলেস্টরেলের মাত্রা 6.2 এর ওপরে থাকে তবে আপনার হাইপার কোলেস্টেরোলেমিয়া রয়েছে যা ডায়বেটিস মেলিটাস, খারাপ খাদ্যাভ্যাস এবং স্থূলতার জন্য দায়ী।
উপসংহার
কোলেস্টেরল কমাতে লেবু শুধু প্রয়োজনীয় তা নয় বরং শরীরকে সুস্থ রাখতে লেবু অপরিহার্য। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট এর জন্য লেবুর সংযোজন আপনার সুস্থতাকে সমুন্নত করবে। এটি কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোক,কিডনির সমস্যা সহ নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। আর যদি উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল আপনার থেকে থাকে তবে অবশ্যই একজন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে পরামর্শ করবেন এবং সেই অনুযায়ী চলবেন। তবে কোলেস্টেরল কমানোর জন্য শুধু লেবু খেলে চলবে না বরং নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য ডায়েটে রাখতে হবে। সর্বোপরি আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে একটি স্বাস্থ্যকর চার্টে।
Read More: