Table of Contents
Toggleভূমিকা কফি (Coffee)
কফি (Coffee) অন্যতম একটি জনপ্রিয় পানীয়। গরমকাল হোক বা শীতকাল কফি প্রেমী ব্যক্তিদের জন্য সকালের শুরুতেই নিজেকে ফুরফুরে করতে যথেষ্ট। এটি শরীরকে প্রাণবন্ত করার পাশাপাশি কর্মক্ষমতায় উজ্জীবিত করতে সক্ষম। শহুরে জীবনে বিশেষ করে এর কদর অনেক বেশি।
কফি একটু তিতকুটে স্বাদের হলেও এর স্বাদ অসাধারণ। তবে যারা এটি পছন্দ করেন শুধুমাত্র তাদের জন্য। কফি পান করার অনেক সুবিধা রয়েছে পুষ্টিবিদদের মত অনুযায়ী। এই পানীয়তে বিদ্যমান উপাদানগুলি মনোদ্দীপক করে তোলে যা অনেকটাই মানসিক চাপ কমায়।
আজকের আর্টিকেলটি আমরা সাজিয়েছি জনপ্রিয় পানীয় কফির মাধ্যমে। চলুন কফি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য গুলি জানার মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবন সুন্দর করি। কেননা কফি কম বেশি সবার প্রিয়।
কফির পরিচিতি
কফি ( Coffee) বিশ্বকাপে জনপ্রিয় একটি পানীয়। কফি বীজ নামক একপ্রকার বীজ পড়ে গুড়ো করার মাধ্যমে কফি তৈরি হয়। এই বীজ কফি তেরি নামে একপ্রকার ফলের বীজ। কফি খেতে চাইলে ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে এই গুঁড়া মিশিয়ে খেতে হয়। কফি জন্মে প্রায় ৭০ টি দেশে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কৃষি পণ্যের মধ্যে বিক্রি হয় সবুজ কফি। কফিতে ক্যাফেইন রয়েছে যা এক ধরনের উত্তেজক পদার্থ। ফলে কফি খেলে এই উপাদানটির প্রভাবে মানুষের শরীরে উত্তেজক ও উদ্দীপক হয়ে কাজ করে। কফি ঠান্ডা ও গরম উভয় হতে পারে। কফি উৎপত্তি দেশ হিসেবে ইয়েমেন এবং আফ্রিকার শৃঙ্গ পরিচিত। কফির বিভিন্ন রং হতে পারে যেমন কালো,গারো বাদামি বা হলদে বাদামী।
কফিয়া গাছের ফল হতে প্রথমে বীজ আলাদা করতে হয়। এরপর এ থেকে সবুজ কফি বীজ তৈরি হয়। যা আপনি খুব সহজেই পানি গরম করে এক কাপ কফি তৈরি করতে পারেন। তবে গরম কফির পাশাপাশি অনেকের বরফ যুক্ত বা ঠান্ডা কফিও পছন্দ। এছাড়া কফির স্বাদ কমাতে বা বাড়াতে চিনি, ক্রিম ও দুধ ব্যবহৃত হয়।
ইতিহাস
কফির (Coffee) উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন উপাখ্যানমূলক গল্প রয়েছে তবে তেমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে প্রচলিত গল্প রয়েছে কালদি নামে একজন ইথিওপিয়ান ছাগল পালক নবম শতাব্দীর দিকে প্রথম কফি গাছ পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং এবং তার ছাগলের পালকে তা চিবোতে দেখেছেন। তবে অনেকেই এই গল্পটিকে অপ্রাসঙ্গিক বলেছেন।
আবার আরেক কিংবদন্তি শেখ ওমরকে কৃতিত্ব দেওয়া হয় কফি আবিষ্কারের। তিনি এই ফলের সন্ধান পেয়েছেন যখন তিনি মোখা শহর হতে নির্বাসিত হন। প্রচলিত আছে তিনি প্রথমে ভাজার এবং চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করেন এবং পরে সেগুলি সিদ্ধ করে এক ধরনের তরল তৈরি করেন। যা তাকে পুনরুজ্জীবিত এবং টিকে থাকার সামর্থ্য জুগিয়েছে।
তবে কফি (Coffee) পানের এই উৎস গুলি তেমন অকাট্য না হলেও কফি গাছ সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। ইয়েমেনের আহমেদ আল গাফফারের ১৫ শতকের মাঝামাঝিতে এক বিবরণে দেখা যায়। ইয়েমেনে বর্তমানের মত কফি প্রস্তুত করা হতো। সুফিরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জাগ্রত থাকার জন্য কফি ( Coffee) পান করতেন। উল্লেখ আছে যে বাণিজ্যের মাধ্যমে ইয়েমেন কফি নিয়ে আসা যেত ইথিওপিয়া থেকে লোহিত সাগরের ওপারে।
আবার আল শারদীর মত অনুযায়ী, ১৪০১ সালে আলী বেন ওমর আদল রাজা সাদাদিনের সঙ্গীদের সঙ্গে যখন ছিলেন তখন কফির সাথে পরিচিত ছিল। এমন আরো অনেক ঐতিহাসিক মতামত রয়েছে। ইসলামিক পন্ডিত ইবনে হাজার আল হায়তামি ১৬ শতকের যিনি বিখ্যাত ইসলামিক পণ্ডিত ছিলেন তিনি তার লেখায় বলেছেন আফ্রিকার শৃঙ্গে জেইলা অঞ্চলের এক গাছ হতে কাহোয়া নামে একটি পানীয় তৈরির কথা উল্লেখ করেছেন।
উপরোক্ত ঘটনাগুলি ছাড়াও কফির আরো অনেক প্রচলিত ইতিহাস রয়েছে। তবে ১৬০০ সালের মধ্যেই কফি ইতালি এবং ইউরোপ, আমেরিকা এবং ইন্দোনেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
কফির উপকারিতা
পরিমিত পরিমাণ কফি (Coffee) পান করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিচে আলোচনা করা হলো-
ক্লান্তি কমায়
কফিতে ক্যাফেইন নামক উপাদান যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপক। এটি পানের মাধ্যমে শরীরে ক্লান্তি কমে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এই ক্যাফেইন এডেনোসিন নামে নিউরোট্রান্সমিটার এর রিসেপ্টর ব্লক করে থাকে এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার এর মাত্রা বাড়িয়ে থাকে। za শক্তির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
বিষন্নতা কমায়
গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে নিয়মিত কফি (Coffee) পান করলে হতাশা কমে। সাতটি সমীক্ষার পর্যালোচনা থেকে জানা যায় এক কাপ কফি পানের মাধ্যমে বিষন্নতার ঝুঁকি কমে চার শতাংশ। এছাড়াও আত্মহত্যার প্রবণতা কমায়।
ওজন কমায়
নিয়মিত কফি পান করলে শরীরের ওজন কমে। বিশেষ করে পুরুষরা নিয়মিত কফি পান করলে শরীরের চর্বি কমে যাবে। শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরকে চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত কফি পান করতে পারেন।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
কফি আলঝেইমার নামক রোগ এবং পারকিনসন রোগ ছাড়াও কিছু নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার হতে রক্ষা করে। নিয়মিত কফি পানের মাধ্যমে পারকিনসন রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি কমে।
আয়ু বৃদ্ধি করে
গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে দীর্ঘায়ু জীবন পেতে কফি সহায়তা করে। কেননা কফি নিয়মিত পানের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ দূর হয় যেমন ক্যান্সার প্রতিরোধ, হার্ট সুস্থ থাকে। ফলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে।
টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
নিয়মিত কফি (Coffee) পানে টাইপ টু ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমে। এটি অগ্নাশয় এর বিটা কোষগুলির কার্যকারিতা বাড়ায়। যার রক্তের শর্করার মাত্রার নিয়ন্ত্রণে রেখে ইনসুলিন তৈরি করে থাকে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং বিপাককে প্রবাহিত করে থাকে।
হার্ট সুস্থ রাখে
হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কফি (Coffee) সাহায্য করে। উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থাকলে পরিমিত পরিমাণ কফি পান করা উচিত।
উপরোক্ত উপকারিতাগুলি কফি পানের মাধ্যমে পেতে পারেন। এতে করে আপনার পছন্দনীয় পানিও পান করতে পারবেন সাথে শারীরিক সুস্থতা লাভ করতে পারবেন।
কফির অপকারিতা
কফির নানা ধরনের উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন জেনে নিই কফের অপকারিতা গুলি-
- কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন। যা শরীরকে উত্তেজিত করার সাথে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে। ফলে অতিরিক্ত কফি খাওয়ার কারণে ঘুম আসে না।
- গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে নিয়মিত কফি যারা পান করেন শরীরে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন হাড়ের ক্ষয় রোধ হওয়া। এছাড়াও যারা অস্টিওপোরসিসে আক্রান্ত তারা অবশ্যই কফি (Coffee)পানের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
- কফিতে ক্যাফেইন নামক উপাদান রয়েছে যার হৃদপিন্ডের রক্ত সরবরাহকারীদের ধমনীতে রক্তের চলাচলকে ধীর গতি করে দেয়। যেমন ব্যায়াম করার সময়। এছাড়াও বুক ধরফরানি, হৃদয় স্পন্দন অনিয়মিত ইত্যাদির জন্য দায়ী অতিরিক্ত ক্যাফেইন।
- কফি খেতে পছন্দ করেন, অবশ্যই খাবেন তবে পরিমিত পরিমান খাবেন। কেননা অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, নিয়মমাফিক কফি খেলে কোন সমস্যা হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই কফি পান সীমিত করুন এবং অপকারিতা রোধ করুন।
কতটুকু কফি খাওয়া যাবে?
আপনি নিয়মিত কফি খেতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না। তবে বেশি খাওয়া উচিত নয়। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী দিনে দুই কাপ কফি খাওয়া যথেষ্ট আবার চাইলে এক কাপ কফিও খেতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন দুই কাপের বেশি যেন না হয়। এছাড়া সন্ধ্যার পর কফি থেকে দূরে থাকা ভালো।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
প্রতিদিন এক কাপ কফি খেলে কি হয়?
গবেষণায় জানা গেছে নিয়মিত এক কাপ কফি পানের মাধ্যমে মানুষের আয়ু বাড়তে পারে এছাড়া পাকস্থলীর রোগ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
নিয়মিত কফি খেলে শরীরে কি হয়?
কফিতে বিদ্যমান ক্লোরোজেনিক এসিড মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। এছাড়াও শারীরিক শক্তি বাড়ায় এবং কফি খেলে সারাদিন অনেক বেশি সক্রিয় থাকা যায়।
ক্যাফেইন কি ভালো?
গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে ক্যাফেইন এর ভালো খারাপ উভয় প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা?
ব্ল্যাক কফির মধ্যে কোন প্রকার ক্যালরি নেই । তাই এটি পান করলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। অ্যালঝেইমারস রোগের ঝুঁকি অনেকখানি কমে। তবে দু থেকে তিন কাপের বেশি খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে এসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অনিদ্রা জনিত সমস্যা হতে পারে।
ত্বকে কফির উপকারিতা?
কফির (Coffee) মাধ্যমে ত্বকের যত্ন নিলে ত্বক আর্দ্র থাকে, চোখের কালো দাগ দূর করে, ফোলা ভাব কমায় এবং সর্বোপরি ত্বকের দৃঢ়তা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
উপসংহার
কফি ( Coffee) শুধু বাংলাদেশ নয় বরং পুরো বিশ্বে জনপ্রিয় একটি পানীয়। দিনের শুরু হোক বা শেষ অনেকে কফি ছাড়া ভাবতেই পারেন না। তবে নিয়মমাফিক খেলে কফি পানের মাধ্যমে আপনি শরীরের অনেক উপকার লাভ করতে পারবেন। আবার অতিরিক্ত খেলে এর মাশুল গুনতে হবে। তাই কফি পানের সঠিক নিয়ম জেনে পান করুন যা আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি । এছাড়াও নিয়মিত কফি পানের মাধ্যমে শরীরে উপকার পাওয়া সম্ভব। কফিতে ক্যাফেইন থাকার ফলে রক্তচাপ কমাতে সহায়ক, হার্ট সুস্থ রাখে, বিষন্নতা দূর করে ইত্যাদি। তাই এর অনন্য উপকারিতা গুলো পেতে নিয়মিত দুই কাপ, অন্তত এক কাপ কফি খেতে পারেন।
Read More:
- জাফরান( jafran ) নিয়ে অজানা কিছু কথা
- কোলেস্টেরল কমাতে লেবু
- আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- পেয়ারার উপকারিতা
এলার্জি রোগের ইংরেজি নাম হল হাইপারসেনসিটিভিটি। এলার্জি রোগীদের অতি সংবেদনশীলতার রোগী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। যে ব্যক্তি যে ধরনের এলার্জি Read more
রক্তে এলার্জি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার Read more
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের মুখে ব্রণ একটি কমন সমস্যা। পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে অবস্থান করেন। বাইরে ধুলাবালি মুখে ব্রণ তৈরি Read more
বদহজম খুবই স্বাভাবিক এবং প্রচলিত একটি সমস্যা। বদহজমের সমস্যা হয় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই Read more
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা রসুনে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। বিভিন্ন ভিটামিন থেকে শুরু করে বায়োএকটিভ যৌগ যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য Read more
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম হল সিজিজিওমোরোমেটাম। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ গাছে Read more