Table of Contents
Toggleজাফরান( jafran)
জাফরান( jafran) সম্পর্কে কমবেশি আমরা সবাই জানি। অনেকেই এটি রান্নায় বা রূপচর্চায় ব্যবহার করে থাকি। বর্তমানে বাংলাদেশেও এর চালান সহজলভ্য হয়েছে।
জাফরান দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এর কার্যকারিতা জাদুকরি। যুগ যুগ হতে বিরিয়ানি, মিষ্টি, শরবত সহ বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয়। বিশ্বজুড়ে মসলাটিকে লাল স্বর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয় এর দামের জন্য।
কিন্তু অনেক বেশি ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে সবার জন্য কেনা সম্ভব হয় না। তবে এর অল্প পরিমাণ ব্যবহার আপনার জীবনে অনেক উপকারিতা বয়ে আনবে। এর গুনাগুনের কথা বিবেচনা করলে এটি ব্যবহার অনেকটাই সাশ্রয়ী। চলুন আজকের আর্টিকেলে জেনে নিই জাফরান কি, এর উপকারিতা ও অন্যান্য গুণাবলী সম্পর্কে।
জাফরান কি?
জাফরানকে ( jafran) ইংরেজিতে বলা হয় স্যাফ্রন বা লাল সোনা হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে থাকে। পৃথিবীর সবথেকে দামি মসলা হিসেবে এর পরিচিতি রয়েছে। খাবারের রং এবং স্বাদ বৃদ্ধিতে এর জুড়ি নেই। জাফরানের আদি জন্মস্থান ইরান তবে এই বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেননা মেসোপটেমীয় এবং মিশরীয় সভ্যতায় জাফরানের ব্যবহার ছিল।
জাফরান বা স্যাফ্রনের বৈজ্ঞানিক নাম হল Crocus sativus। যা একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। জাফরানের সাধারণত ফুল হয় এর কোন ফল হয় না। এর কারণে উদ্ভিদ উৎপাদনে সরাসরি মানুষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়।
এই উদ্ভিদের ফুলের পাপড়ি গুলি বেগুনি রংয়ের হয়ে থাকে এবং ভেতরে লাল দণ্ড গুলি কমলা ও হলুদ রংয়ের মিশ্রণে সাধারণত লালবর্ণ ধারণ করে।
ফুলের ভেতরে যে লাল পরাগদন্ড থাকে সেটি শুকনো হলে জাফরান বলে ধরা হয়। এই মসলার কদর বিশ্বব্যাপী রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন পার্টির রান্না ও বড় বড় অনুষ্ঠানে জাফরান ব্যবহার হয়। কেননা এটি খাবারের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি করে তেমনি স্বাদেও।
তবে সব ধরনের মাটিতে জাফরানকে ( jafran) উদ্ভিদ জন্মায় না। আবার এক কিলোগ্রাম জাফরান মসলা উৎপাদনের জন্য প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ফুলের প্রয়োজন হয়। এটি তুলতে সময় লাগে প্রায় ৪০ ঘন্টার মত। ফলে প্রতি কিলোগ্রাম জাফরানের মূল্য প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা হয়ে থাকে।
এছাড়াও এই ফুল ছয় ইঞ্চি উচ্চতায় হয় ফলে সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ করতে হয়। সর্বোপরি ফুল উৎপাদন থেকে মসলা তৈরির আগ পর্যন্ত প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় এজন্য দাম বেশি হয়ে থাকে। পৃথিবীর প্রায় বৃষ্টি দেশের জাফরানের চাষ হয়ে থাকে এর মধ্যে অন্যতম হলো ইরান ও কাশ্মীর। জাফরান বলতে আমরা ইরান ও কাশ্মীরের কথাই ভাবি। পৃথিবীতে মোট জাফরান সরবরাহের দিক দিয়ে প্রায় ৮০% এর ওপর জাফরান বাজারজাত হয়ে থাকে ইরান থেকে।
জাফরান খাওয়ার উপকারিতা
জাফরান ( jafran) শুধু খাবার বা রূপচর্চায় নয় এটি একটি ভেষজ মসলা হিসেবে পরিচিত। আয়ুর্বেদিক থেকে শুরু করে প্রায় বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় এই মসলা ব্যবহার হয়। এতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ, ভিটামিন ও মিনারেল সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। নিচে এর উপকারিতা গুলি আলোচনা করা হলো-
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
জাফরানকে ( jafran) রক্ত চলাচল বৃদ্ধি এবং হরমোন উদ্দীপ্ত করে। ফলে এটি মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। অনেক গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে স্মৃতিশক্তি যাদের দুর্বল তারা জাফরান খেলে তাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
স্বাস্থ্য উন্নত করে
নিয়মিত জাফরান খাওয়ার ফলে এটি হরমোন উদ্দীপক হিসেবে কাজে দেয়। এতে বিদ্যমান পুষ্টি হলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
জাফরানে ( jafran) রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। এই উপাদান শরীরের রক্ত পরিশুদ্ধ করে রক্ত তৈরি হতে সহায়তা করে। ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।
অনিদ্রা দূর করে
অনেকের রাতে ঘুম আসতে চায় না। যা স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে। ঘুমানোর আগে দুধের সঙ্গে অল্প পরিমাণ জাফরান মিশিয়ে খেলে ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে। ফলে শরীর ও স্বাস্থ্য উন্নত হয়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করে
অনেকের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা থেকে থাকে। আবার সর্দি- কাশি সমস্যা লেগে থাকে। এছাড়াও এজমা ও পারটুসিস দূর করতে এই মসলাটি খুব ভালো কাজ করে।
এসিডিটি দূর করে
জাফরান হজম এর সমস্যা এবং পেটের পিড়া জনিত সমস্যা দূরীভূত করে। ফলে এসিডিটির সম্ভাবনা কমে যায়।
মাসিকের ব্যথা উপশম করে
প্রতিমাসে অনেক মেয়েরা মাসিকের ব্যথায় জর্জরিত থাকেন। মাসিক হওয়ার পূর্বে এটি সেবন করলে অনেকটা ব্যথা দূর হওয়া সম্ভব।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে
সাধারণত জাফরানকে ( jafran) শরীরে কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ রাখে। আবার জাফরানের রয়েছে পটাশিয়াম যার হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে। তাই হৃদপিণ্ড সুস্থ ও স্বাভাবিক ঠিক রাখতে জাফরান খুব দারুণ একটি মসলা।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ক্যান্সার মূলত হঠাৎ করেই শরীরে উৎপন্ন হয় না। বরং হওয়ার জন্য কিছু ভাইরাস রয়েছে। যেগুলি শরীরে থাকলে ক্যান্সারের শ্রেষ্ঠ হয় একসময়। বিশেষ করে কোলন ও প্রটেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য জাফরানের ভূমিকা রয়েছে।
উপরোক্ত উপকারীগুলো ছাড়াও জাফরানের অনেক উপকার রয়েছে। তবে সেগুলি পেতে আপনাকে জাফরান ( jafran) খেতে হবে।
গর্ভকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাফরানের ব্যবহার
ফেসবুকে প্রায় দেখা যায় অনেক অনলাইন জাফরান ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন গর্ভকালীন সময়ে জাফরানকে ( jafran) খাওয়ার ফলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়। অনেকেই এসব প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে পড়েন। ফলে গর্ভবতী মায়েদের কাছে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি বাড়ছে।
এই ধারণাটি কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা সে সম্পর্কে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সাবিকুন নাহার বলেছেন,
“জাফরান খাবারের শুধু রঞ্জক হিসেবে ব্যবহৃত এক ধরনের মসলা। এর সাথে গর্ভকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনরকম সম্পর্ক নেই। এছাড়াও মেডিকেল সাইন্স এর গাইনী বিষয়ক কোন ধরনের বইয়ে গর্ভকালীন সময় নারীদের খাদ্য তালিকাতে জাফরানের কথা কোনভাবেই উল্লেখ করা নেই। এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তাই এই সময় খাওয়ার ব্যাপারে তিনি সাজেস্ট করেননি “
জাফরানের অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে কিছু ভুল তথ্য ফেসবুক বা অন্য কোন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে কিছু স্বার্থলোভী ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আসল জাফরান চেনার উপায়
আসল জাফরান ( jafran) চেনার উপায় হল স্বাদ ও গন্ধ। বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, আসল ইরানি জাফরান গুলির গন্ধ অনেক বেশি মিষ্টি এবং তীব্র হয়ে থাকে। এছাড়া স্বাদ কিছুটা তিতকুটে হয়। আসল জাফরান চেনার জন্য একটি ছোট পরীক্ষা করা যেতে পারে। কয়েকটি জাফরান নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কেননা আসল জাফরান পানির সঙ্গে মিশতে সময় নেয় এবং এর রং একটু ধীরে ধীরে ছাড়ে। তবে পানিতে রং ছাড়লেও এর দন্ড লাল রঙের থাকে। কিন্তু জাফরান নকল হলে পানিতে ভেজানোর সময় রঙ দ্রুত ছাড়ে এবং দন্ড সাদা বা হলুদ রঙের হয়ে যায়।
ছেলে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন বলেছেন,
জাফরানের নাম নিয়ে বাজারে কুসুম ফুলের শুকনো পাপড়ি পাওয়া যায়। অনেকে আসল নকলের পার্থক্য বোঝেন না। তারা এই কুসুম ফুলের শুকনো পাপড়ি জাফরান হিসেবে কিনে ঠকে যান। এছাড়া দুই গোটা নামে একটি ফলও রয়েছে যা দেখতে চিরুনির ফলার মত খোলসওয়ালা এবং টকটকের লাল। ফলে বিক্রেতারা সহজেই জাফরানের নামে চালিয়ে দেয়।
তবে গর্ভকালীন সময়ে জাফরান খেতে পারেন। কেননা এই সময়ে মায়েদের বাত ব্যথা বা ঘুমের সমস্যা হতে পারে। দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে ঘুমের সহায়ক হবে, ব্যথা দূর হবে।এছাড়াও জাফরান খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকবে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
জাফরান সবচেয়ে দামি মসলা কেন?
জাফরান হতে ফুলের ছোট অংশ ব্যবহার করতে হয় । এক পাউন্ড জাফরান মসলা তৈরির জন্য ৭৫ হাজার জাফরান ফুলের প্রয়োজন হয়। প্রতি গাছ থেকে অল্প পরিমাণ জাফরান মসলা পাওয়া যায় সেই সাথে ফসল কাটতে হয় ম্যানুয়ালি। তাই জাফরানের দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে।
পৃথিবীর সেরা জাফরান কোন দেশে পাওয়া যায়?
গুণমানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো জাফরান উৎপাদিত হয় ইরানে। যা বিশ্বসেরা হিসেবে সমাদৃত। এখানে মূলত আদর্শ আবহাওয়া ও মাটির অবস্থার অস্তিত্ব রয়েছে।
জাফরান এর উপকারিতা?
জাফরানের অনেক উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা যেমন কাশি, অ্যাজমা ইত্যাদি রোগ দূর করে।
জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়?
রান্না থেকে রূপচর্চা পর্যন্ত সবেতেই জাফরান ব্যবহৃত হয়। ত্বক সুন্দর রাখতে জাফরান সহায়তা করে। কিন্তু জাফরান খেলে ত্বক ফর্সা হয় এমন কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম?
জাফরান ( jafran) খেতে চাইলে সবচেয়ে ভালো হয় দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সঙ্গে জাফরান সঙ্গে কিসমিস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
উপসংহার
জাফরান ( jafran) একটি দামি মসলা হলেও এর উপকারিতা অনেক বেশি রয়েছে। এটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও সহায়ক। তবে বর্তমানে জাফরানের অনেক ছড়াছড়ি দেখা যায়। এর মধ্যে অনেক নকল পণ্য রয়েছে। সেসব পণ্যের ভিড়ে আসল জাফরান খুঁজে পাওয়ায় মুশকিল।
জাফরান খাওয়ার মাধ্যমে উপকৃত হতে চাইলে অবশ্যই বুঝিয়ে শুনে যাচাইয়ের মাধ্যমে আসল জাফরান কিনবেন। কেননা এত দামি একটি মসলা নকলটি কিনে কেউই আশাহত হতে চাইবে না। আশা করি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে জাফরান সম্পর্কে আপনাদের অনেক ধারনা পরিষ্কার হয়েছে।
Read More:
- কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
- পেঁয়াজের উপকারিতা
- কাঁচা পেঁপের উপকারিতা
- কালো জিরার উপকারিতা | টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
এলার্জি রোগের ইংরেজি নাম হল হাইপারসেনসিটিভিটি। এলার্জি রোগীদের অতি সংবেদনশীলতার রোগী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। যে ব্যক্তি যে ধরনের এলার্জি Read more
রক্তে এলার্জি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার Read more
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের মুখে ব্রণ একটি কমন সমস্যা। পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে অবস্থান করেন। বাইরে ধুলাবালি মুখে ব্রণ তৈরি Read more
বদহজম খুবই স্বাভাবিক এবং প্রচলিত একটি সমস্যা। বদহজমের সমস্যা হয় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই Read more
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা রসুনে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। বিভিন্ন ভিটামিন থেকে শুরু করে বায়োএকটিভ যৌগ যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য Read more
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম হল সিজিজিওমোরোমেটাম। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ গাছে Read more