প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ | শরীলে কোন রোগ থাকলে প্রসাব হলুদ হয়

প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ

Table of Contents

প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ

প্রসাবের হলুদ রং ইউরোক্রোম নামক একটি রঙ্গক থেকে সৃষ্ট হয়ে থাকে। আমাদের শরীরের লাল রোহিত রক্ত কণিকার থেকে নির্গত প্রোটিন থেকে এটি উৎপন্ন হয়। ইউরোক্রোম আমাদের শরীরের একটি দূষিত বর্জ্য। এটি প্রসাবের সঙ্গে শরীর থেকে নির্গত হওয়ার সময় হলুদ রং ধারণ করে। প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকগুলো বিষয় দায়ী থাকে। 

প্রসাবের রং হলুদ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো শরীরে ইউরোবিলিন পিগমেন্ট উৎপাদন। আবার শরীরে পারমশূন্যতা তৈরি হলে অথবা পানি কম খেলে প্রসাবের রং হলুদ হয়। কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হলেও প্রসাবের রং পাল্টায়। অসুখগুলোর নাম হল: লিভার সিরোসিস, কিডনিতে পাথর, জন্ডিস, হেপাটাইটিস, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি। 

এই অসুখগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্রসাবের রং পরিবর্তন হয়। এবং এই অসুখগুলোর প্রাথমিক লক্ষণ হল প্রসাবের রং হলুদ হওয়া এবং প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করা। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

 

প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

প্রসাবের রং যদি ঠিক থাকলে বুঝে নেওয়া যায় যে শরীর সুস্থ আছে। তার মানে এটা নয় যে প্রসাবের রং পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আপনি কোন জটিল এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রসাবের রং পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে তাৎক্ষণিকভাবে বেশি করে পানি পান করুন।

 যদি ডিহাইড্রেশনের কারণে প্রসাবের রং পরিবর্তন হয় তাহলে পানি পান করার ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই সেটা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু শরীরে কোন জটিল রোগ বাসা বাধলে প্রসাবের রং হলুদ হয় এবং সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া পর্যন্ত তা ঠিক হয় না। চলুন প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সমূহ জেনে নেই:



হেপাটাইটিস:

প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ এর মধ্যে অন্যতম একটি অসুখের নাম হল হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিস হলে সাধারণত লিভার ফুলে যায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মাদকাসক্ত হলে হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার কোন হলুদ রং এর ঔষধ খেলে প্রসাবের রং হলুদ হতে পারে।

 

প্রতিকার:

মাদকদ্রব্য সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে। এবং হঠাৎ করে কোন ঔষধ সেবনের ফলে প্রস্রাবের রং হলুদ হলে বুঝতে হবে এটি ওষুধের সাইড ইফেক্ট।



জন্ডিস:

জন্ডিস হলে শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত বিলিরুবিন প্রসাবের সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। তাই এই সময় প্রস্রাবের রং হলুদ হয়।

প্রতিকার: জন্ডিসের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার খান।



লিভার সিরোসিস:

লিভারে যেকোনো সমস্যা হলে তার প্রথম লক্ষণ হল প্রসাবের রং পাল্টে দেওয়া। লিভার সিরোসিস হলে পায়ের চামড়ার রং হলুদ হয় এবং প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে বের হয়।

প্রতিকার: এরকম অবস্থায় প্রাথমিকভাবে কিডনির উপর চাপ পড়ে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন, এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।



কিডনির পাথর:

প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ
প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ

 

কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হল প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করা এবং প্রসাবের রং হলুদ হওয়া।

প্রতিকার: প্রস্রাবের সময় কোন রকম কষ্ট অনুভব করলে সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

 

প্রসাব হলুদ ও গন্ধ হওয়ার কারণ

আমাদের শরীরের প্রায় সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ প্রসাবের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। প্রসাবের ৯৫ ভাগ পানি এবং বাকি অংশটুকু ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন। প্রসাবে কিছুটা ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে। এই গন্ধ হওয়ার মূল কারণ হলো অক্সিডেটিভ ক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া যৌগ। শরীরে বিভিন্ন অসুবিধার কারণে প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ হলো ‘ইউরিন ইনফেকশন’। চলুন এক নজরে দেখে নেই প্রসাব হলুদ ও গন্ধ হওয়ার কারণ: 

 

  • ইউরিন ইনফেকশন,
  • রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া,
  • জননতন্ত্রের সংক্রমণ,
  • জরায়ু মুখের সমস্যা,
  • ক্যাফেইন যুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া,
  • পেয়াজ রসুন অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে প্রস্তাবে গন্ধ হয়,
  • ভিটামিন বি জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক,
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।

 

ইউরিন ইনফেকশন:

প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ
প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ

 

ইউরিন ইনফেকশন এর ফলে মূত্রনালীতে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। ফলে শরীর থেকে প্রসাব বের হওয়ার সময় কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ফলে প্রসব হলুদ হয় এবং গন্ধ হয়।

 

রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া:

ডায়াবেটিস রোগীদের এবং যাদের রক্তের সুগার বেড়ে যায় তাদের প্রসাবের রং হলুদ হওয়ার স্বাভাবিক। এসব রোগীদের হলুদ প্রসাব এর সাথে দুর্গন্ধও থাকে।

 

জননতন্ত্রের সংক্রমণ:

মূত্রনালী সংক্রমণ অথবা জননতন্ত্রের সংক্রমনের ফলে শরীর থেকে নির্গত প্রসাব হলুদ হয় এবং দুর্গন্ধযুক্ত হয়। এরূপ হলে দ্রুত ডক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

 

জরায়ু মুখের সমস্যা:

জরায়ুর মুখে সংক্রমণ থাকলে ইউরিন ইনফেকশন এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রসাবের রং হলুদ হয় এবং গন্ধ হতে পারে।

 

ক্যাফেইন গ্রহণ করা:

অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেন জাতীয় খাবার যেমন: চা-কফি বেশি খেলে প্রস্রাবের রং হলুদ হতে পারে।

 

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস:

প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ
প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ

 

ডায়াবেটিসের মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে গেলে প্রসাবের রং হলুদ হয়। এবং এই সময় এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলেও প্রসাবের থেকেও দুর্গন্ধ আসতে পারে।

 

প্রস্রাবের রং দেখে রোগ নির্ণয়

প্রসাবের রং বলে দেয় আপনার শরীরে কোন রোগ বাসা বেধেছে কিনা। আবার প্রসাবের রং দেখে বোঝা যায় আপনি ঠিক কি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন আমরা আলোচনা করব কিভাবে প্রস্রাবের রং দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়?

 

হালকা গোলাপি রঙের প্রসাব:

বিভিন্ন রকম ঔষধ এর ইফেক্ট এর কারনে গোলাপি রঙের প্রসাব হতে পারে। তাছাড়া ইউটিআই, টিউমর, প্রস্টেটের সমস্যা, কিডনিতে স্টোন ইত্যাদি কারণেও গোলাপি রঙের প্রস্রাব হয়।

 

ঘোলাটে প্রস্রাব:

কিডনির বিভিন্ন ইনফেকশনের জন্য ঘোলাটে রঙের প্রস্রাব হতে পারে। তবে দুই থেকে তিন দিন ঘোলাটে রঙের প্রস্রাব হলে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু অনেকদিন ধরে হতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

কমলা রঙের প্রস্রাব 

প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ
প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ

 

বিশেষ কিছু ঔষধের সাইড ইফেক্ট এর কারণে প্রসাবের রং কমলা রঙের হতে পারে। তবে এটা যদি অনেকদিন যাবত হতে থাকে তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়

কিডনিতে কোনরকম সমস্যা অথবা মূত্রনালী ইনফেকশন এর জন্য পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হতে পারে। প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করা।

ইউরিনারি ট্র্যাক্টের সংক্রমনের ফলে প্রসাবের বেগ বার বার আসে। এ সময় প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাছাড়া কিডনিতে পাথর, কিডনি ফুলে যাওয়া, কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হয়।



প্রস্রাব হলুদ হলে কি খাওয়া উচিত

সাধারণত গরমের দিনে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে যাওয়ার ফলে প্রসাবের রং হলুদ হয়। তাই অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন প্রস্রাব হলুদ হলে কি খাওয়া উচিত? প্রসাবের রং হলুদ হলে সবার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। 

এক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩ লিটার এর বেশি পানি পান করার চেষ্টা করবেন। এতে করে শরীর ডিহাইড্রেট এর সমস্যা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। তাছাড়া প্রসাব হলুদ হলে আখের রস, শরবত, মিশ্রি ভেজানো পানি, ফলের রস ইত্যাদি তরল খাবার বেশি করে গ্রহণ করতে হবে।

 

বাচ্চাদের প্রস্রাব হলুদ হওয়ার কারণ

কয়েকটি কারণে বাচ্চাদের প্রসবের রং হলুদ হয়। 

বাচ্চাদের প্রস্রাব হলুদ হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

  • শরীরে পানি শুন্যতা সৃষ্টি হওয়া,
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন বি শরীরে প্রবেশ করা,
  • ম্যালেরিয়ায় হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে।

উপরিউক্ত কারণগুলোর জন্য বাচ্চাদের প্রসাবের রং হলুদ হয়। তবে এটা দীর্ঘদিন ধরে হতে থাকলে অবশ্যই শিশু ডক্টর এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

 

হলুদ প্রস্রাব থেকে মুক্তির উপায়

হলুদ প্রস্রাব থেকে মুক্তির উপায় হল অধিক পরিমাণে পানি পান করা। সকালবেলা উঠে খালি পেটে পানি পান করুন। এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার হলুদ‌ প্রসাবের রং স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম শরবত এবং তরল খাবার খেতে পারেন। তবে এগুলোতে যদি কাজ না হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিন।

 

শেষ কথা 

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা প্রসাব হলুদ হওয়ার কারণ এবং এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। প্রসাবের রং বলে দেবে আপনি সুস্থ নাকি অসুস্থ। তাই দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তিত প্রসাবের রং নিয়ে বসে থাকবেন না। যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।



বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

 

১) প্রস্রাব হলুদ হওয়ার কারণ কী?

উত্তর: কিডনির সমস্যা এবং বিভিন্ন রোগের উপসর্গের কারণে প্রস্রাব হলুদ হয়।



২)প্রস্রাবের স্বাভাবিক রং কেমন হয়?

উত্তর: প্রস্রাবের স্বাভাবিক রং স্বচ্ছ সাদা থেকে হালকা ফ্যাকাসে হলুদ পর্যন্ত হতে পারে।

 

৩) প্রস্রাব হলুদ হওয়ার চিকিৎসা?

উত্তর: প্রসাব হঠাৎ করে হলুদ হলে প্রতিদিন ৪ লিটার পানি পান করুন।

 

৪) কোন ঔষধ খেলে প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয়?

উত্তর: রিফাম্পিন, ডক্সোরুবিসিন এবং প্রোপোফল এই ঔষধ গুলো খাওয়ার ফলে প্রসাবের রং হলুদ হয়।

 

Read More:

বদহজম দূর করার উপায়
রক্তে এলার্জির লক্ষণ
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায়
Related Posts
এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম | এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়
এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

এলার্জি রোগের ইংরেজি নাম হল হাইপারসেনসিটিভিটি। এলার্জি রোগীদের অতি সংবেদনশীলতার রোগী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। যে ব্যক্তি যে ধরনের এলার্জি Read more

বদহজম দূর করার উপায়
বদহজম দূর করার উপায়

বদহজম খুবই স্বাভাবিক এবং প্রচলিত একটি সমস্যা। বদহজমের সমস্যা হয় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই Read more

পেটে গ্যাস এর লক্ষণ
পেটে গ্যাস এর লক্ষণ

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যে কতটা অস্বস্তিকর তা একমাত্র তারাই জানেন যারা এই সমস্যায় ভুগছেন। পেটে গ্যাস হলে সাধারণ কিছু লক্ষণের মাধ্যমেই Read more

লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় লেবু হলো এক ধরনের সাইট্রাস ফল যা স্বাদে ও বহুমুখীতার জন্য পরিচিত। লেবু ত্বকে Read more

Leave a Comment