রক্তে এলার্জির লক্ষণ

রক্তে এলার্জির লক্ষণ

Table of Contents

রক্তে এলার্জি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার করতে গিয়ে যদি হাঁচি পড়ে বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় এছাড়াও বিভিন্ন খাবার যেমন চিংড়ি, ইলিশ, গরুর মাংস, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, কচু ইত্যাদি খাওয়ার পর গায়ের চুলকানি বা লাল লাল র‍্যাশ বের হয় তাহলে বুঝে নেবেন আপনার রক্তে এলার্জির লক্ষণ পুরোপুরি  প্রকাশ য়েছে। কোন ব্যক্তির রক্তে যদি এলার্জির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে তাহলে সেটি তিনি কিভাবে বুঝবেন এবং তা থেকে পরিত্রাণ পেতে কি উপায় অবলম্বন করবেন আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

 

রক্তে এলার্জি কেন হয়? 

রক্তে এলার্জি বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষই সে বিষয়ে অজ্ঞ। তবে এই বিষয়টি আমাদের প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত। যেসব কারণে রক্তে এলার্জি হয় সেগুলো আলোচনা করা হলো:-

 

ধুলাবালি 

বাহিরে হোক কিংবা ঘরে থাকা ধুলাবালিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এলার্জি। এই ধুলাবালি নাকের ভিতরে গিয়ে আপনার শরীরে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। তাই বাহিরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং বাড়িতে যেকোনো ধুলাবালির কাজে মাস্ক পড়ে কাজ করা উত্তম। 

 

এলার্জি যুক্ত খাবার 

এলার্জি যুক্ত খাবার যেমন পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, চিংড়ি, ইলিশ ইত্যাদি খাবার দীর্ঘদিন খেলে এলার্জি সমস্যা হতে পারে। তাই এলার্জির মুক্ত থাকতে চাইলে এলার্জি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। 

 

পালিত পশুর লোম 

যে কোন প্রাণীর পশমের মাধ্যমে  সহজেই এলার্জি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই পালিত পশুকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় তাদেরকে কোলে নেওয়া বা তাদের নিয়ে শুয়ে থাকা পরিহার  করা। 

 

এলার্জি যুক্ত ঔষধ 

আমরা অনেকেই এলার্জিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরেই ওষুধ খায়। কিন্তু কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং রক্তে এলার্জির লক্ষণ গুলি দেখা দিতে পারে । এগুলি আপনাকে এলার্জি মুক্ত না করে বরং এলার্জি সমস্যায় বাড়িয়ে দিতে পারে তাই ঔষধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া ভালো। 

 

পোকামাকড়ের কামড় 

আমাদের চারপাশে বিভিন্ন পোকামাকড় রয়েছে যেগুলি বিষাক্ত। পোকামাকড় এর কামড়ে আপনার শরীরে এলার্জির জীবাণু প্রবেশ করতে পারে এই সাবধানে থাকা ভালো। 

 

ফুলের পাপড়ি 

বিভিন্ন ফুলের পাপড়ি বা পরাগরেণুতে এলার্জি থেকে থাকে যা ফুলের ঘ্রাণ নেওয়ার সময় শরীরে প্রবেশ করে। তাই এলার্জি মুক্ত থাকার জন্য এগুলো ঘ্রাণ না নেওয়াই ভালো।

 

রক্তে এলার্জির লক্ষণ 

আপনার রক্তে যদি এলার্জি থাকে তবে লক্ষণ অবশ্যই প্রকাশ পাবে। নিচের রক্তে এলার্জির লক্ষণ গুলি আলোচনা করা হলো- 

  • নাক দিয়ে সব সময় পানি ঝরা বিশেষ করে শীতের সময় 
  • সারা শরীরে লাল লাল রেস বের হওয়া এবং চুলকানো 
  • চোখ লাল হয়ে যেতে পারে 
  • শরীরে চাকা চাকার মত হয়ে যেতে পারে 
  • ঘ্রাণ শক্তি কম অনুভূত হওয়া 
  • গলা চেপে ধরা 
  • তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া 
  • বমি হওয়া ইত্যাদি 

 

রক্তে এলার্জি বেশি হলে যা হতে পারে 

রক্তে যদি বেশি এলার্জি থাকে তাহলে যেসব সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে-

  • শ্বাসকষ্ট হওয়া 
  • শরীরে অতিরিক্ত চুলকানি ভাব হওয়া 
  • ঠোঁট, জিহ্বা, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া 
  • শরীরে রেস উঠা 
  • গলায় বাবুকে অতিরিক্ত পরিমাণ চাপবোধ হওয়া
  • নিম্ন রক্তচাপ 

উপরোক্ত এই সমস্যাগুলি ছাড়াও আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

সমস্যাগুলীর যেকোনো একটি আপনার শরীরে দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। 

এই রোগের জন্য বেশ কয়েক রকমের চিকিৎসা হয়ে থাকে সেগুলি গ্রহণ করতে পারেন। যেমন-

  • অক্সিজেন থেরাপি 
  • এ্যাপিনফ্রিন ইনজেকশন গ্রহণ 
  • স্টেরয়েড নেওয়া 
  • এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি 

 

রক্তে এলার্জি কমানোর এলোপ্যাথি ঔষধ 

রক্তে এলার্জির লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে সবচেয়ে উত্তম উপায় হল ডক্টরের পরামর্শ গ্রহণ করা। সে ক্ষেত্রে ডক্টর আপনাকে বিভিন্ন ঔষধের পরামর্শ দিতে পারেন। রক্তে এলার্জি কমানোর বিভিন্ন ওষুধ গুলির নাম হলো-

ঔষধের নাম  মূল্য (প্রতি পিস)
Alatrol 2.71৳
Alargol 2.40৳
Acitrin 2.75৳
Atrizin 2.70৳
Citin 27.00৳
Cetmax 3.00৳
Cetizin 2.50৳
Dyzin 2.64৳
Rizin 2.26৳
Nosemin 2.70৳

 

উপরের এই ওষুধগুলি ছাড়াও আরো অনেক ওষুধ রয়েছে রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমানোর জন্য। এই ওষুধগুলি সেবন করলে তাৎক্ষণিকভাবে এলার্জি কমবে। তবে শুধু ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে না খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন এটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে। 

 

রক্তে এলার্জি কমানোর হোমিও ঔষধ 

রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমানোর জন্য 

এলোপ্যাথি ওষুধের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি ওষুধও অনেক সহায়ক। বেশিরভাগ মানুষ এলোপ্যাথি চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল হলেও অনেক মানুষ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। যেসব হোমিও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমানো সম্ভব সেগুলি হল:

 

সাবাধিলা ( Sabadilla)

যখন মুখের ভেতরের তৃষ্ণার্ত অবস্থা তৈরি হয় এবং তালুতে চুলকানি হলে চুলকানোর পর একটি গন্ধের সৃষ্টি হয় তখন এই ওষুধটি ব্যবহার করতে হবে। 

 

ওয়াইথিয়া ( Wyethia) 

শরীরের মুখ, নাক, গলা ইত্যাদি জায়গায় শুকনো ভাগ হলে এবং চোখ গলা,কানসহ পায়ের তালুতে চুলকানি হলে এই ওষুধটি সেবন করতে হবে। 

 

পুলসেটিলা ( Pulsatilla) 

অতিরিক্ত হাঁচি আসলে সাধারণত এলার্জির কারণে হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে ঘন ঘন ভাজি এবং কানের ও নাকের কিছু অংশ পেকে যেতে পারে সে ক্ষেত্রে এই ওষুধটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

 

ইউফ্রেশিয়া ( Euphrasia) 

অনেক সময় চোখের পানি অনবরত করতে থাকে হতে পারে সেটি বাতাস লাগার কারণে। কিন্তু ধীরে ধীরে এই পানিটি ঘন হয়ে থাকে যা রক্তে এলার্জির লক্ষণ গুলির একটি। 

 

কালি বিক্রমিকাম ( Kali Bichromicum) 

রক্তে এলার্জির পরিমাণ দূর করার জন্য এই ওষুধটি বেশ কার্যকরী। সাধারণত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সবুজ বা হলুদ ধরণের দাগ লক্ষ্য করা যায় সেগুলি দূর করতে এটি খুব ভালো কাজে দেয়। 

অনেকেই মনে করেন হোমিওপ্যাথি ওষুধের অনেক বেশি সাইড ইফেক্ট থাকে তবে সাইড ইফেক্ট যেকোনো ওষুধের থাকতে পারে। 

 

রক্তে এলার্জি থাকলে যেসব সমস্যা দেখা দেয় 

রক্তে এলার্জি থাকলে বিভিন্ন সমস্যা শরীরে দেখা দিতে পারে এই সমস্যাগুলি আপনাকে মৃত্যুর ডাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। তাই সময় থাকতেই আপনাকে সচেতন হতে হবে। রক্তে এলার্জি থাকলে আপনার শরীরে চুলকানি ভাব হতে পারে, ধুলাবালি সহ্য না হওয়া, এলার্জি জাতীয় খাবার খেলেই শরীরের লাল লাল ভাব হওয়া, সুগন্ধি সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি। তাই আপনার রক্তে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে এলার্জি জাতীয় সব রকম বস্তু, খাবার ও জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকবেন। 

 

রক্তে এলার্জি থাকলে যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা 

দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন খাবারেই এলার্জি রয়েছে। অনেক খাবার আমাদের প্রিয় হওয়া সত্বেও এলার্জির কারণে বর্জন করতে হয়। অনেক সময় আমরা লোক সামলাতে পারি না ফলে এলার্জি থাকলেও খেয়ে ফেলি। তবে রক্তে এলার্জির লক্ষণ দেখা দিলে সে সব খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখায় বুদ্ধিমানের কাজ। খাবারগুলি হল-

  • ডিম 
  • দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার
  • চিনা বাদাম সহ বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন- পাইনবাদাম, ব্রাজিল নাটস, কাঠবাদাম ইত্যাদি 
  • বিভিন্ন ধরনের মাছ যেমন চিংড়ি ইলিশ কাঁকড়া শামুক ইত্যাদি  
  • বিভিন্ন শাকসবজি যেমন- পুঁইশা,  মিষ্টি কুমড়া, কচু জাতীয় সবজি  ইত্যাদি। 

উপরের এই খাবার গুলিতে অনেক বেশি পরিমাণে এলার্জি রয়েছে। যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের এসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে আপনি আপনার এলার্জিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। 

 

রক্তে এলার্জি কমানোর ঘরোয়া উপায় 

রক্তে এলার্জির জন্য বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় যেমন- লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। 

রক্তে এলার্জি লক্ষণ এবং এলার্জি কমানোর এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি উপায় নিয়ে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। এখন কিছু ঘরোয়া উপায় আলোচনা করব:

 

নিম পাতার রস 

নিম পাতার রস এলার্জি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই রস খাওয়ার মাধ্যমে আপনি দ্রুত উপকার পাবেন। 

 

আদা চা 

আদার মধ্যে রয়েছে এন্টিহিস্টামিন এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য যা এলার্জি প্রতিকারের মহা ঔষধ। বেশি সময় নিয়ে আদা চা তৈরি করুন এবং নিয়মিত পান করুন এটি রক্তে এলার্জির লক্ষণ গুলি পরিচালনা করতে সাহায্য করে। 

 

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার 

ভিটামিন সি  সমৃদ্ধ খাবারে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি খাবারগুলি হল স্ট্রবেরি, আমলক,  বেল, ব্রকলি, বিভিন্ন ফল ইত্যাদি। এই খাবারগুলি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করুন এই খাবারগুলি গ্রহণ করলে এলার্জির সমস্যা কম হবে। 

 

মধু এবং হলুদ 

হলুদ একটি বিখ্যাত প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মসলা। হলুদের রয়েছে  কারকিউমিন যা এন্টিহিস্টামিন হিসেবে কাজ করে। এটিকে শক্তিশালী করার জন্য মধু মিশ্রিত করতে হবে তাহলে একটি ভাল ফলাফল আসবে। 

উপরে উল্লেখিত উপায় গুলি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমাতে। 

 

উপসংহার

রক্তে এলার্জির লক্ষণ এবং এলার্জির পরিমাণ কমানোর উপায় সকলের জেনে রাখা উচিত বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে। কেননা এলার্জির মাত্রাতিরিক্ত  বৃদ্ধি আপনার মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে এছাড়াও শারীরিক অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি আপনার এলার্জি থেকে থাকে তবে শরীর ফিট এবং সুস্থ রাখতে এলার্জি জাতীয় খাবার পরিহার করুন এবং যেসব খাবার এলার্জি মুক্ত ও স্বাস্থ্যকর সেগুলি গ্রহণ করুন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেল পরলে রক্তে এলার্জি কেন হয়, এর লক্ষণ এবং উপায় সম্পর্কে আপনার জানার তথ্য সমৃদ্ধ হবে। 

 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন 

১. এলার্জির জন্য কি ঔষধ? 

উত্তরঃ  এলার্জির ওষুধের নাম গুলি হল-

  • Histakind 120 MG Tablet
  • Glenfine 120 MG Tablet
  • Alernex 120 MG Tablet etc.

 

২. এলার্জির রক্ত পরীক্ষার ফলাফল কতদিন লাগে? 

উত্তরঃ এলার্জির জন্য রক্ত পরীক্ষা করলে ফলাফল প্রায় সাত দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়। 

 

৩. বিরলতম এলার্জি কোনটি? 

উত্তরঃ এলার্জির একটি বিরল অবস্থা হল এ্যাকোয়াজেনিক urticaria যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিটি যখনই পানির সংস্পর্শে আসে তখনই  চুলকানি অনুভূত  হয়। 

 

৪. বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ এলার্জি কোনটি? 

উত্তরঃ বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ এলার্জি গুলোর মধ্যে একটি হলো পরাগ এলার্জি।

 

Read More

এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

Leave a Comment