খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

Table of Contents

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা 

খেজুর একটি উপকারী ফল এবং পুষ্টির  ভান্ডার । এটি খেতে আমরা কম বেশি সবাই পছন্দ করি। এটি যেমন আমার শরীরে পুষ্টি যোগায় খাবারের চাহিদাও পূরণ করে। সকালে খালি পেটে কয়েকটি খেজুর খেলে সারাদিনের কার্যক্ষমতায় শক্তি সরবরাহ করে। খেজুর গাছ সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। খেজুর শুকনো এবং তাজা উভয় হতে পারে। তবে খেজুরের যে প্রকারই হোক না কেন এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যকর। 

নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরে অনেক চাহিদার ঘাটতি পূরণ করে থাকে। আজকাল আর্টিকেলটি আমরা সাজিয়েছি খেজুরের পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা নিয়ে। চলুন সে সকল বিষয়ে জানি এবং খেজুর নিয়ে খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেক তথ্য।

 

খেজুর কি ধরনের ফল?

খেজুর কি? এর ইংরেজি শব্দ হল Date Fruit এবং খেজুরের বৈজ্ঞানিক নাম হল ফিনিক্স ড্যাক্টিলিফেরা। খেজুর ফলটি সাধারণত খেজুর গাছের থেকে হয়। খেজুর গাছ হলো সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর উচ্চতা সাধারণত ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। একক মূল সিস্টেম থাকে এবং অনেক বেশি ডালপালা সহ গুচ্ছ ভাবে গঠিত হয়। বীজ থেকে সহজেই খেজুর গাছ জন্মায়। চারা গুলোর ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ স্ত্রী হয়  সেগুলি ফল ধারণ করে। খেজুর গাছগুলি ১০০ বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে। খেজুর গাছের পাতাগুলি লম্বা হয় চার থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত। এই পাতাগুলো কাটাযুক্ত হয় এবং প্রায় ১০০ হতে ১৫০ টি লিফলেট সহ পিনাট থাকে।

খেজুরের উৎপাদন প্রচুর পরিমাণে হয় সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য এবং সৌদি আরবের বিভিন্ন দেশে। 

এছাড়াও ইরাক, ইরান, মরক্কো, তুরস্ক, ইসরাইল, চীন, তিউনিশিয়া, ইত্যাদি খেজুর উৎপাদনকারী প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত।

খেজুর কি এশিয়ার মহাদেশগুলোতে হয়? খেজুর ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এসব দেশগুলোই কম পরিমাণে উৎপন্ন হয়। 

 

খেজুরের পুষ্টি উপাদান

ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম,ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই,প্রোটিন, ফসফরাস, সোডিয়াম,ম্যাগানিজ, ভিটামিন বি ৬,জিংক, জল, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ফ্যাট। খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কম বেশী সবাই জানেন।

এখন জানবো প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুর একই পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে-

প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরের মধ্যের পুষ্টি উপাদান:

  • ক্যালোরি- ২৭৭ কিলোক্যালরি
  • কার্বোহাইড্রেট – ৭৪.৯৭ গ্রাম
  • ক্যারোটিন – ৭৫ মাইক্রগ্রাম
  • নিয়াসিন – ১.২৭৪ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি – ০.৪ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ – ৬ মাইক্রগ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ – ৫৪ মিলিগ্রাম
  • আয়রন – ০.৯০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি ৬ – ০.২৪৯ মিলিগ্রামক
  • ফোলেট – ১৯ মাইক্রগ্রাম
  • থায়ামিন – ০.০৫২ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন কে – ২.৭ মাইক্রগ্রাম
  • ভিটামিন ই – ০.০৫ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ৩৯ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম – ২ মিলিগ্রাম
  • জিংক – ০.২৯ মিলিগ্রাম
  • জল – ২০.৫ গ্রাম।
  • প্রোটিন – ১.৮১ গ্রাম
  • মোট চর্বি- ০.১৫ গ্রাম
  • ফাইবার – ৬.৭ গ্রাম
  • পটাসিয়াম – ৬৯৬ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম – ০.২৯৬ মিলিগ্রাম

 

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা 

তবে খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেকেই জানিনা। এর উপকারিতা গুলি হল-

খেজুর হজম শক্তি উন্নতি করে 

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা হজম শক্তি উন্নতি করতে সহায়তা করে। 

খেজুর শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে 

শর্করা নিয়ন্ত্রণে খেজুরের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ খেজুরে বিদ্যমান গ্লাইসেমিক খুব কম থাকে যার রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে থাকে। 

খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে 

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে খেজুর কি, এর অবদান অনস্বীকার্য। খেজুরের মধ্যে থাকা সাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই যারা দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠি নিয়ে ভুগছেন তারা এটি দূর করার জন্য নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। 

খেজুর হাড় মজবুত করে 

হার মজবুতকরনে খেজুর সহায়তা করে। দুঃখের জুড়ে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস। হাড়ের সমস্যা দূরীকরণ এবং হারকে আরো মজবুত ও শক্তিশালী করতে এর অবদান অনস্বীকার্য। 

খেজুর ত্বকের জন্য উপকারী 

খেজুর কি ত্বকের জন্য উপকারী? নিঃসন্দেহে বলা যায় খেজুর ত্বকের জন্য খুব উপকারী। কারণ খেজুরে রয়েছে ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন সি। যা ত্বকে নরম রাখতে এবং ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 

খেজুর মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে 

মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে বা তীক্ষ্ন করতে খেজুর সাহায্য করে। আলঝেইমার এর মত নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ এর ঝুঁকি কমায়। কারণ খেজুরে রয়েছে ভিটামিন বি ও কোলাজ যা স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। 

খেজুর হ্যাংওভার নিরাময় করে 

হ্যাংওভার হতে মুক্তি পেতে খেজুর সহায়তা করে। তবে এর জন্য সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে হবে তবে এ থেকে মুক্তির সম্ভব। 

রক্তশূন্যতার জন্য উপকারী খেজুর 

খেজুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন। এটি শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে কার্যকর। তাই যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য খেজুর কি পরিমান গুরুত্বপূর্ণ তা বলার বাকি রাখে না। 

খেজুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খেজুর খুব কার্যকরী একটি ফল। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে 

খেজুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ফল যার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

ফোলা কমাতে সাহায্য করে খেজুর 

অনেক সময় শরীরে নানা কারণে ফোলা ভাব দেখা দেয়। এর কারণে আমরা অনেক আলাদা আলাদা ওষুধ খেয়ে থাকি বা ম্যাসাজ করি। খেজুরের মধ্যে বিদ্যমান পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ফোলা ভাব বা ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। 

খেজুর চুলের জন্য খুবই উপকারী 

খেজুরের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন যা চুল মজবুত করতে সহায়ক। 

পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা

গুণগত শুক্রাণু বৃদ্ধিতে খেজুর ভূমিকা রাখে। খেজুর ল্যাবনয়েড এবং এক্সট্রাডিওল দ্বারা লোড হয় যা শুক্রানু সংখ্যা বৃদ্ধিতে কার্যকরী। 

 

খেজুরের অপকারিতা 

 খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত জানবো।

খেজুরের অপকারিতা:-

  • অতিরিক্ত মাত্রায় খেজুর খেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে। 
  • অতিরিক্ত পরিমাণ খেজুর খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। 
  • এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত খেজুর খেলে বদহজম হতে পারে এছাড়াও অন্যান্য পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে যা শরীরে প্রেসার কমানোর বদলে বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

 

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় 

খেজুর কি দিনের যেকোনো সময় খাওয়া যায়? জি অবশ্যই যেকোনো সময় খেতে পারবেন। তবে 

সর্বোত্তম উপায় হল সারারাত খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা পানিসহ খেয়ে ফেলা। যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি পাবেন। ব্যায়াম বা পরিশ্রমের আগে কয়েকটি খেজুর খেয়ে নেই এতে ক্লান্তি আসবে না সহজে। 

প্রতিদিন খেজুর সকালে খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন এতে করে কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা দূর হবে। দুধের সাথে খেজুর মিশিয়ে খেতে পারেন কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। 

এছাড়াও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে কয়েকটি খেজুর খেতে পারেন। এটি শরীরে থাকা অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করবে। 

কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন 

দিনে কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত? 

দিনে চার থেকে পাঁচটি অথবা ১০০ গ্রাম খেজুর। তবে বেশি খেলে শোনাবে না থাকে। 

খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে? 

ওজন বাড়াতে খেজুরের তুলনা নেই। মাত্রাতিরিক্ত খেজুর খেলে ওজন কমার বদলে আরো ওজন বাড়বে। তবে ওজন বাড়াতে বা মাসল বিল্ড করতে এটি খুবই উপকারী। 

খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়? 

খালি পেটে খেজুর খেলে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, হিমোগ্লোবিন বাড়ে, ত্বক টানটান থাকে, খুসখুসে কাশি দূর হয় ইত্যাদি। 

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়? 

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। একটু শক্ত খেজুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খাওয়া ভালো এটি কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশ দূর করে দেয়। এছাড়া মুখের লালাকে খাবারের সঙ্গে ভালোভাবে মিস করতে সহায়তা করে। 

খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা? 

খেজুর ভিজিয়ে রেখে খেলে সাইটিক অ্যাসিড বা ট্যানিন দূর হয়, সহজে হজম হয় এছাড়া ওজন কমাতে কার্যকরী হিসেবে খেজুরের গুরুত্ব অপরিসীম।

কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো? 

দিছে প্রায় ৬০০ রকমের খেজুর দেখা যায়। এরমধ্যে সবচেয়ে ভালো খেজুরগুলি হলো- আজওয়া, মেজুল, ওমানি, ডেগলেট নূর, হালাউয়ি, মাজাফাতি ইত্যাদি। 

 

উপসংহার

খেজুর একটি উপকারী ফল। যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের পুষ্টি  চাহিদা পূরণ হয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় খেজুর যোগ করলে শরীরের পরিবর্তন গুলি টের পাওয়া যায়।

খেজুর এটি মিষ্টি জাতীয় ও স্বাস্থ্যকর ফল যা দ্রুত এনার্জি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত খেজুর খেলে শারীরিক দুর্বলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

খেজুরে রয়েছে এমন সব পুষ্টি উপাদান যা একজন ব্যক্তির প্রতিদিনের ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে থাকে। 

আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা  ও এর পুষ্টিগুন  সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

 

Read More:

  1. কোলেস্টেরল কমাতে লেবু
  2. কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
  3. কাঁচা পেঁপের উপকারিতা
Related Posts
এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম | এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়
এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

এলার্জি রোগের ইংরেজি নাম হল হাইপারসেনসিটিভিটি। এলার্জি রোগীদের অতি সংবেদনশীলতার রোগী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। যে ব্যক্তি যে ধরনের এলার্জি Read more

রক্তে এলার্জির লক্ষণ
রক্তে এলার্জির লক্ষণ

রক্তে এলার্জি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার Read more

ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায়
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায়

নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের মুখে ব্রণ একটি কমন সমস্যা। পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে অবস্থান করেন। বাইরে ধুলাবালি মুখে ব্রণ তৈরি Read more

বদহজম দূর করার উপায়
বদহজম দূর করার উপায়

বদহজম খুবই স্বাভাবিক এবং প্রচলিত একটি সমস্যা। বদহজমের সমস্যা হয় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই Read more

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা রসুনে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। বিভিন্ন ভিটামিন থেকে শুরু করে বায়োএকটিভ যৌগ যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য Read more

রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম হল সিজিজিওমোরোমেটাম। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ গাছে Read more

Leave a Comment