Table of Contents
Toggleআজওয়া খেজুর
আজওয়া খেজুর নিঃসন্দেহে একটি উপকারী খেজুর। মদিনার উৎকৃষ্টতম খেজুর হিসেবে পরিচিত এই আজওয়া। তবে খুব কম মানুষই এটি খেয়ে থাকেন। কারণ এই খেজুরটি টা অন্যান্য খেজুরের তুলনায় একটু বেশি। তবে দামে বেশি হলেও খেজুরটির গুরুত্ব এতটাই বেশি যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই খেজুরের অনেক উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
আজওয়া খেজুর দেখতে সাধারণত ছোট ও কালো রংয়ের হয়। অনেকটা জামের মতো দেখতে। এটি খেতে অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
সঠিক গুনাগুন ও পুষ্টি সম্পর্কে জানলে আপনিও আগ্রহী হতে পারেন খেজুরটি নিয়মিত খেতে। চলুন আজকের এই আর্টিকেলটি এই গুরুত্বপূর্ণ খেজুর সম্পর্কে জানি এবং উপকারিতাগুলি অন্বেষণ করি।
আজওয়া খেজুর কি
আজওয়া খেজুরের উদ্ভব সৌদি আরব ও মদিনা থেকে হয়েছে বলে জানা যায়। আরবে ৮০০০ বছরের বেশি সময় ধরে খাওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। আজওয়া খেজুর উৎপন্নের প্রধান বাসস্থল হচ্ছে সৌদি আরব। নির্দিষ্ট জলবায়ুর কারণে এই অঞ্চলে ভালোভাবে জন্মাতে পারে। জুলাই -আগস্ট মাসে গরম আবহাওয়া থাকার কারণে শুকনো পর্যায়ে বাছাইকৃত পড়ে সারা বছর বাজারজাত করা যায়।
বিশ্বের প্রাচীনতম গাছগুলির মধ্যে এই খেজুরের গাছ একটি। যা বাৎসরিকভাবে ১২ ইঞ্চি বৃদ্ধি পায় এবং ১০০ ফুট উচ্চতায় পর্যন্ত পৌছাতে পারে। খেজুর হলো আল মাদিনা শহরে এক আদিবাসী প্রজাতি যা সৌদি আরবের একটি স্থানের নাম। পন্ডিত ইবনে মনজির তার আল আরব লিসনে উল্লেখ করেছেন একটি নির্দিষ্ট জাতের খেজুকে আজওয়া বলা হয় যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম প্রথম খেজুর সংগ্রহ করেছেন।
এগুলো দেখতে কালো এবং আকৃতিতে গোলাকার ও দৃড় হয়ে থাকে। এই আজব খেজুরে রয়েছে নানা ঔষধি গুণ ও উপকারিতা। পবিত্র কোরআনে খেজুরের কথা উল্লেখ রয়েছে ছাব্বিশ বার। রাসুল সাঃ এর প্রিয় ফল ছিল খেজুর এবং আজওয়া খেজুর সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের অনেক হাদিস রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যাক্তি প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে আজওয়া খেজুর কয়েকটি করে খাবে সেই দিন রাত পর্যন্ত কোনো প্রকার জাদু ও বিষ তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। “
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আরও বলেছেন, “খোদ জান্নাত থেকে এসেছে আজও খেজুর।” (তিরমিজি)
আজওয়া খেজুরের পুষ্টিগুণ
আজওয়া খেজুর এর মধ্যে রয়েছে নানা রকম পুষ্টিগুণ। বিভিন্ন উপকারী উপাদানগুলি হল:
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি৬, ই, সি এবং কে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এই খেজুরে। এছাড়াও রয়েছে কেরোটিনয়েড এবং ভিটামিন এ যা চোখের জন্য উপকারী। আরো রয়েছে থায়ামিন, নিয়াসিন, ফোলেট ও রিবোফ্লাভিন।
আজওয়া খেজুরের উপকারিতা
আজওয়া খেজুর যেমন উপকারী তেমনি এর চাহিদা শীর্ষ খেজুর গুলির মধ্যে অন্যতম। এই খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে মানুষ উপকারগুলি আহরণ করতে চায়। স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি ধর্মীয়ভাবে এর চাহিদা রয়েছে শীর্ষে। এই খেজুরের উপকারিতা গুলি হল-
হৃদপিন্ডের সুস্থতার জন্য উপকারী
আজওয়া খেজুরে রয়েছে উচ্চ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যা কোলেস্টেরল কমায় এবং আপনার শরীরের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নতি করবে। আজওয়া খেজুরের বীজে এমন উপকারিতা রয়েছে যাক মানব দেহের বেশিরভাগ অংশ গঠন হয় এমন অ্যাডিপোজ টিস্যু চর্বি ভেঙে দেয়। এমনকি রক্ত বহনকারী ধমনীর প্রাচীরে যে চর্বি থাকে সেগুলি ভেঙ্গে দেয়। এটি কার্ডিয়াক সমস্যা কমায় ও হার্টের সমস্যা উন্নত করে।
ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে
এই খেজুরে বিদ্যমান পুষ্টি গুলি আপনার সারাদিনের কাজে এনার্জি নিয়ে আসে এবং ক্লান্তি দূর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্ষতিকারক বিভিন্ন কারণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। বিশেষ করে অ্যাথলেটদের জন্য এটি একটি বিস্ময়কর উপকারী ফল। যা তাদের শরীরের প্রয়োজনে শক্তি বৃদ্ধি করে।
স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ বজায় রাখে
আজওয়া খেজুর কিডনির কার্যকারিতা দ্রুত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে নিয়মিত আজও খেজুর খেতে পারেন এটি আপনাকে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।
বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় সাহায্য করে
বর্তমানে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা খুব জটিল একটি সমস্যা। যাক ক্রমাগতভাবে বেরিয়ে চলেছে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই একইভাবে এই সমস্যায় ভুগছেন। আজোয়া খেজুরে রয়েছে নানা পুষ্টিকর গুনাগুন যা উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। পুরুষের গুণগত মানসম্পন্ন শুক্রাণু উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং মহিলাদেরও বন্ধ্যাত্ব সমস্যা এই খেজুরের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। কারণ এই খেজুর তাদের জরায়ুর অ্যন্ডোমেট্রিয়াল আস্তরণকে ঘন করতে সহায়তা করে।
বদহজম নিরাময় করে
আজওয়া খেজুর ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণের পাশাপাশি হজম করতে সহায়তা করে। এই খেজুরের বীজে এমন উপকারী গুণ থাকে যা ফোলা ভাব দূর করে এবং এতে বিদ্যমান পটাশিয়াম এর জন্য পেট খারাপ সমস্যা প্রতিহত হয়।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলি ছাড়াও আজওয়া খেজুরের আরো অনেক উপকার রয়েছে। সেগুলি হল:
- আজওয়া খেজুর বিষের একটি মহোষধ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
- লিভার ও পাকস্থলী শক্তিবর্ধক
- স্নায়বিক শক্তি বৃদ্ধি করে
- ফুসফুসের সাথে সাথে মুখ গহবরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
- ভিটামিন এ থাকার ফলে দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ
- যারা নেশা করে তাদের অঙ্গ ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে
- উচ্চমাত্রায় শর্করা, সেট ও ক্যালোরি থাকার জন্য মূত্রথলির ইনফেকশন ও যৌন রোগের সমস্যা দূর করে।
- শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করে
- প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
এছাড়া আজওয়া খেজুর সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে। চলুন এখন জেনে নিই কিছু হাদিস-
সাদ রাঃ বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি ভোরে ৭টি করে আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোন প্রকার জাদু টোনা ও বিষ তার ক্ষতি করতে পারবে না।
আলী রাঃ বলেছেন যে, ” যে ব্যাক্তি প্রতিদিন সাতটি করে আজো আর খেজুর আহার করবে, তার পাকস্থলে যেকোনো রোগ নির্মূল হয়ে যায়। (কানযুল উম্মাল, হাদিস :২৮৪৭২;তবে অনেক অনেক অনেকে বর্ণনাটিকে দুর্বল বলেছেন)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু থেকে হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন ” আল-আলিয়ার আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালে উপবাস ভাঙলে তার সর্বপ্রকার বিষক্রিয়া বা জাদুর আরোগ্য হিসেবে কাজ করে থাকে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস :২৩৫৯২)
আল-আলিয়া বলতে বোঝানো হয়েছে যে মদিনার পূর্ব দিকে কয়েক মাইল দূরে কিছু গ্রামকে।
বিশেষ করে রমজান মাসে খেজুর খাওয়া নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসালাম এর অনেক হাদিস রয়েছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাঃ বলেছেন, “ রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দঘন সময় রয়েছে। একটি ইফতারের সময় (যে সময় দোয়া কবুল হয়) এবং অন্যটি (কেয়ামতের দিন) যেদিন নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। (বুখারী হাদিস নং ৭৪৯২)
উপরোক্ত হাদিস থেকে আমরা বলতে পারি রোজার সময় ইফতারে আমরা অবশ্যই খেজুর দিয়ে ইফতার করতে পারি। এবং সেটি যদি হয় আজওয়া খেজুর দিয়ে তবে আমাদের সুন্নত পালন এবং শরীরের যাবতীয় পুষ্টি আহরিত হবে।
“আরো পড়ুন”
আজওয়া খেজুর চেনার উপায়
আজওয়া খেজুর যখন কিনবেন অবশ্যই আসল কিনা দেখে কিনবেন। কেননা এত দাম দিয়ে কেনে সেটি যদি আসল না হয় তবে কষ্টের শেষ থাকে না। বর্তমানে এই খেজুরের নামে আরেকটি খেজুর চালিয়ে দেওয়া হয়। যার নাম হলো জুজুবি। এটি চীনে চাষ হয় এবং এর চাহিদা প্রচুর। বাংলাদেশেও এই জুজুবি ফল আজুয়া খেজুর বলে বিক্রি করা হয়। আসল আজোয়া খেজুর চেনার উপায় হলো-
খেজুর কেনার সময় ত্বক দেখুন। যেগুলো খেজুর তাজা ও সতে তাদের চামড়া কুঁচকানো হবে। চামড়া হবে উজ্জ্বল ও চকচক এবং আসল খেজুরের স্বাদ অতিরিক্ত মিষ্টি হয় না। এটি অনেকটা সহনশীল হয়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
আজওয়া খেজুর খেলে কি হয়?
আজওয়া খেজুর খেলে পেটের গ্যাস কফ দূর করে, শুকনো কাশি ও অ্যাজমায় উপকারী।
এছাড়াও ঠান্ডা জনিত সমস্যা, গনোরিয়া, যৌনরোগ, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে অনেক কার্যকরী ইত্যাদি
আজওয়া খেজুরের স্বাদ কি ভালো?
আরব ঐতিহ্যে আজোয়া খেজুর একটু বিশেষ স্থান দখল করে আছে। আজওয়া খেজুর খেতে সুস্বাদু এবং মিষ্টি। আপনি এটিকে চাইলে কিসমিসের সাথে খেতে পারেন। হাজার বছর ধরে এটি আরবে সুপার ফ্রুট হিসেবে পরিচিত।
আজওয়া খেজুর খেলে কি ওজন কমে?
আজওয়া খেজুরে রয়েছে উচ্চ প্রোটিন যার কারনে ওজন কমাতে কার্যকরী। কেননা প্রোটিন আপনাকে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা লাগতে দেয় না। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ যা আপনাকে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।
আজওয়া খেজুরের দাম বেশি কেন?
আজওয়া খেজুরের দাম বেশি কারণ হল এর কম সরবরাহ এবং উচ্চ চাহিদা। এটির উপকারিতা অনেক বেশি যা উচ্চ মূল্যের আরেকটি কারণ।
উপসংহার
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও উত্তম খেজুর গুলোর মধ্যে হল আজওয়া খেজুর। উপরের আলোচিত বিষয় থেকে আমরা নিঃসন্দেহে বুঝতে পারলাম যে এর উপকারিতা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এই ফল নিয়মিত সেবনে কোন প্রকার খারাপ প্রভাব আমাদের ওপর পড়বে না। এছাড়া বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বিশেষ করে রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পরে আমাদের শরীরে যে খাদ্য ঘাটতি হয় তা এই খেজুরের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। এতে করে এই খেজুরের মাধ্যমে আমরা ইফতার করতে পারবো, আমাদের সুন্দর একটি সুন্নত পালন হবে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের শরীর হেফাজতে থাকবে।
“আরো পড়ুন”
এলার্জি রোগের ইংরেজি নাম হল হাইপারসেনসিটিভিটি। এলার্জি রোগীদের অতি সংবেদনশীলতার রোগী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। যে ব্যক্তি যে ধরনের এলার্জি Read more
রক্তে এলার্জি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার Read more
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের মুখে ব্রণ একটি কমন সমস্যা। পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে অবস্থান করেন। বাইরে ধুলাবালি মুখে ব্রণ তৈরি Read more
বদহজম খুবই স্বাভাবিক এবং প্রচলিত একটি সমস্যা। বদহজমের সমস্যা হয় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই Read more
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা রসুনে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। বিভিন্ন ভিটামিন থেকে শুরু করে বায়োএকটিভ যৌগ যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য Read more
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম হল সিজিজিওমোরোমেটাম। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ গাছে Read more