Table of Contents
Toggleবিটরুট(beetroot) সবার স্বাস্থ্যের জন্য একটি উপকারী সব্জি। বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে সুপার ফুড হিসেবে। অনেকেই এটিকে সালাদ হিসেবে খায় যা স্বাস্থ্যকর।
Beetroot এক প্রকার সব্জি যা তরকারি রান্নার মাধ্যমে খাওয়া যায়। এটি এমন একটি সবজি যার উপকারিতা আপনি যেভাবেই খান না কেন অবশ্যই পাবেন।
এই বিভিন্ন উপাদানসমৃদ্ধ ফুড নানা সমস্যার সমাধান হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি বিটরুট নিয়ে। আশা করি এই যাত্রায় আপনাদের উপভোগ্য পাব এবং বিটরুট এর নানাবিধ কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বিটরুট এর উপকারিতা
আপনার খাবার তালিকাতে beetroot তরকারি হিসেবে বা সালাদ হিসেবে যুক্ত করতে পারেন। এতে আপনার শরীর একাধিক উপকার লাভ করতে পারবে। চলুন বিটরুটের উপকারিতা গুলি জেনে নিই-
উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
একটা নির্দিষ্ট সময় পরে নারীদের মনপোজ হয়ে থাকে। এই সময় শরীর অনেক বেশি লবণ শোষণ করে খাবারের মাধ্যমে যার রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এতে করে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয় যেমন মাথা ব্যাথা ও বুক ধরফর করা ইত্যাদি। বিটরুট এই সমস্যা নিরসনে বেশ উপকারী। এছাড়াও গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে বিটে নাইট্রেটস রয়েছে। যার রক্তনালী প্রসারিত করার মাধ্যমে রক্তচাপ কমিয়ে ফেলে। তাই ওপরের সমস্যাগুলি দেখা দিলে অবশ্যই বিটরুট খাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
হজম শক্তি বাড়ায়
Beetroot সাধারণত আঁশ জাতীয় একটি সবজি। আর আঁশ জাতীয় খাবার হজম হতে সহায়তা করে। আর হজমের সমস্যা সমাধান হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও এই সবজি খাওয়ার ফলে ডাইভার্টিকুলাইটিস ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
জ্বালাপোড়া বা প্রদাহ কমায়
বিটরুটে রয়েছেন নাইট্রেট যা রক্তনালির প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এতে আরেকটি উপাদান রয়েছে বেটালাইনস। এটি ও রক্তনালীর প্রদাহ কমায়।
শারীরিক শক্তি বাড়ায়
প্রতিটি মানুষেরই বয়স হওয়ার সাথে সাথে শারীরিক শক্তি কমে যায়। বিট এমন এক ধরনের সবজি যাতে রয়েছে নানাবিধ গুণ। বিট খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে তাই আপনার খাবার তালিকায় এটি রাখতে কার্পণ্য করবেন না।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়
বিটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পিগমেন্ট। যাক কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ভালো কাজ করে। কোলন ক্যান্সারের জন্য দায়ী কারসিনোজেন। যা লাল beetroot খাওয়ার মাধ্যমে এর সঙ্গে লড়াই করা যায়।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
বয়সের সাথে সাথে একসময় স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। আবার মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা অনেকখানি কমে যায়। এই সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে বিট আপনাকে সাহায্য করবে। কেননা বেট খাওয়ার মাধ্যমে ব্লাড সুগার সঠিক থাকে এবং মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে সহায়তা করবে।
দীর্ঘ মেয়াদী চোখের যত্নে
বিটরুট কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। এটি সাধারণত চোখের জন্য খুব উপকারী একটি সবজি। এতে রয়েছে এক এন্টিঅক্সিডেন্ট যা সাধারণত লুটেইন হিসেবে পরিচিত। লুটেইন চোখের রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
অন্যান্য উপকারিতা গুলি-
- বিটরুট নিয়ম মত খেলে শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীভূত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেজন্য চাইলে এর জুস করে খেতে পারেন।
- বিটরুটে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড। গর্ভকালীন সময় খুবই জরুরী একটি বিষয়। কেননা ফলিক অ্যাসিড বাচ্চার জন্মকালীন ত্রুটি ঠেকাতে সাহায্য করে।
- বিটরুটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন যার রক্তশূন্যতা প্রতিহত করে। এছাড়াও এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন b12 পাবেন।
- আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে বিটরুট খেতে পারেন। এটি লিভারকে সুস্থ রাখতে সহায়তা কর।
- পিত্তথলি ও কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধ করে এবং পাকস্থলীতে এসিড জমা হতে বিরত রাখে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি Beetroot খুব উপকারী একটি খাবার। সঠিকভাবে বিটে উপকারগুলি আহরণ করতে নিয়মমাফিক খেতে পারেন। এটি আপনার শরীরে কিছু বাড়তি পুষ্টি যোগাতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও নানা ধরনের অসংক্রামক রোগ যেমন আর্থাইটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি রোগ সারাতে সহায়তা করে।
“আরো পড়ুন”
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
বিটরুট কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশে বিটরুটের চাষ বেশি পরিমাণে হয় না। তবে বাণিজ্যিকভাবে ভারতে এর চাষ হয়। সাধারণত বাংলাদেশ বিদ্রোড আমদানি করে ভারতের কাছ থেকে। তবে আমাদের দেশেও কিছু পরিমাণ উৎপাদন হয়। আপনি যদি সংরক্ষণ করতে চান তবে ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে কিনতে পারবেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে সবচেয়ে ভালো হয় বিটরুটের পাউডার বানিয়ে রাখা অথবা আপনি চাইলে সহজে এখন অনলাইন বিভিন্ন পেজ থেকে এই পাউডার কিনতে পারবেন।
বিটরুট পাউডার এর দাম কত
Beetroot পাউডার কিনার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যে পেজ থেকে আপনি কিনছেন সেটি যেন অথেন্টিক হয়। কেননা ভেজাল পন্য হলে উপকারের বদলে অপকার বেশি হবে আবার টাকাও লস যাবে। সাধারণত ২০০ গ্রাম Beetroot পাউডার বিক্রি হয় ৯০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।
এছাড়া কাঁচা সবজি কিনতে চাইলে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে পাবেন। আবার জায়গা ভেদে আরো কমে পেতে পারেন।
বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
Beetroot এর উপকারিতা আমরাইতোমধ্যে ওপরে আলোচনা করেছি। তবে এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে। নিয়মমাফিক খেলে আপনার শরীর বিভিন্ন ভিটামিনস পাবে এবং নানা রোগ থেকে বাঁচতে পারবে। প্রতি 100 গ্রাম বিটের মধ্যে রয়েছে ৪৪ ক্যালোরি, ফ্যাট রয়েছে ০.২ গ্রাম, ফাইবার রয়েছে তিন গ্রাম এবং প্রোটিন রয়েছে ২.১৭ গ্রাম। WHO এ এক গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে উচ্চ রক্তচাপে প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে এর মধ্যে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা দূরীকরণে বিট খুব উপকারী। কেননা শুধু মেডিসিন খেয়ে অসুস্থতা দূর করা খুব একটা নিরাপদ নয়। স্বাস্থ্যকর ডায়েট উপকারী শাকসবজি পারে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে বিভিন্ন রোগের সাথে লড়াই করতে।
শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ২ গ্রাম বিট খাওয়া জরুরি। এটি আপনার রক্ত চলাচলের গতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করবে। এছাড়া সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানির সঙ্গে এক চামচ Beetroot পাউডার মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাবেন। তবে খেয়াল রাখবেন এটি কোন মেডিসিন নয় যেকোনো নির্দিষ্ট নিয়মই আপনাকে খেতে হবে। আপনি চাইলে জুস করে, রান্না করে বা হালুয়া বানিয়েও খেতে পারেন।
বিটরুট কাদের খাওয়া উচিত নয়
- Beetroot এ রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে উচ্চমাত্রার নাইট্রেট। যা আপনার পরিপাকতন্ত্রকে নাইট্রিক অক্সাইডে পরিনত করে। এই উপাদানগুলি রক্তনালিকে শিথিল করে। এছাড়াও প্রসারিত করে যা রক্তচাপ কমায়। এটি নিম্ন রক্তচাপ ব্যক্তিদের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাদের এড়িয়ে চলাই উত্তম।
- কিডনিতে পাথর বা গলব্লাডারের সমস্যা থাকলে বিটরুট খাবেন না। এতে বিদ্যমান অক্সালেট শরীরের সমস্যা বৃদ্ধি করবে।
- ডায়াবেটিস থাকলে Beetroot খাবেন না। বিটে রয়েছে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যার রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করবে। তাই অবশ্যই বিটরুট খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে Beetroot খাবেন না এতে ত্বকের চুলকানি ও অ্যালার্জি হতে পারে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
বিটরুট কিভাবে খায়?
বিট রোড আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এটি কিভাবে খাবেন আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি চাইলে এটি তরকারি রান্না করে খেতে পারবেন আবার জুস বা সালাদ তৈরি করেও খেতে পারবেন।
বিট কি কাঁচা খাওয়া যায়?
অবশ্যই, এটি কাঁচা খাওয়া যায়। সালাদের মাধ্যমে অথবা স্যুপে দিয়ে খেতে পারেন। এটি শুধু রোগমুক্তির জন্য নয় বরং সুন্দর শরীর গড়তে সহায়ক।
বিটের জুস কতটুকু খাওয়া উচিত?
গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, প্রতিদিন দুই কাপ করে বিটের জুস খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া এই জুস খেয়ে ব্যায়াম করলে এটি আপনার স্ট্যামিনাকে সাহায্য করবে।
বিটের জুস কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
আপনার যদি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি থেকে থাকে তবে অবশ্যই বিটার জুস এড়িয়ে চলবেন। কারণ পিঠে অক্সালেটের পরিমাণ অনেক বেশি যা আপনার সমস্যার কারণ হতে পারে।
বিট কিভাবে খেতে হয়?
এটি কাঁচা ও রান্না উভয়ভাবি খাওয়া যায়। আপনি চাইলে রান্না করেও খেতে পারেন আবার জুস করে অথবা ইট পাউডার বানিয়ে রাখতে পারেন।
উপসংহার
Beetroot পর্যাপ্ত পরিমাণ বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে। এটি প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সমস্যার নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বে এটি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সবজির পাশাপাশি এর পাউডার অনেক জনপ্রিয়।
Beetroot সাধারণত লাল রঙের এক ধরনের সবজি। যা আপনি তরকারি রান্নায়, সালাদের মাধ্যমে বা জুস করে খেতে পারবেন। এছাড়াও Beetroot আচার হিসেবে সংরক্ষণ করা যায়। আবার অনেকেই Beetroot পাউডার করে ব্যবহার করেন। সর্বোপরি বলা যায় বিটরুট বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়।
এটি শুধু আপনার শারীরিক সুস্থতায় উপকারী নয় বরং বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণ এর গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের আর্টিকেলে পড়লে আশা করব বিদ্যুট সম্পর্কিত অনেক বিষয় আপনাদের কাছে পরিষ্কার হবে।
এলার্জি রোগের ইংরেজি নাম হল হাইপারসেনসিটিভিটি। এলার্জি রোগীদের অতি সংবেদনশীলতার রোগী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। যে ব্যক্তি যে ধরনের এলার্জি Read more
রক্তে এলার্জি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার Read more
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের মুখে ব্রণ একটি কমন সমস্যা। পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে অবস্থান করেন। বাইরে ধুলাবালি মুখে ব্রণ তৈরি Read more
বদহজম খুবই স্বাভাবিক এবং প্রচলিত একটি সমস্যা। বদহজমের সমস্যা হয় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই Read more
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা রসুনে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। বিভিন্ন ভিটামিন থেকে শুরু করে বায়োএকটিভ যৌগ যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য Read more
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম হল সিজিজিওমোরোমেটাম। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ গাছে Read more