ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা | কখন খাবেন ডাবের পানি

ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

ডাব খুব পরিচিত একটি ফল। আজকের আমাদের আর্টিকেলের মূল বিষয় হলো ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা। বাংলাদেশে যেকোনো মৌসুমি আপনি ডাবের পানি খেতে পারবেন তবে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। শরীরে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে ডাক্তাররা লাভের পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। আবার অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহে থাকলে ডাবের পানি খাওয়া যাবে না। আজকের আলোচনায়  আমরা ডাব সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় জানার চেষ্টা করব।

ডাবের পানির উপকারিতা 

গরমে এক কথায় সবার প্রিয় পানীয় হলো ডাবের পানি। এটি একদিকে যেমন তৃষ্ণা মেটায় তেমনি আরেক দিকে শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এখন আমরা ডাবের পানি উপকারিতা আলোচনা করব-

ত্বকের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা

ডাবে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ তাই ডাব খেলে ত্বক পরিষ্কার থাকবে। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি য,  ডাবে উপস্থিত এমিনো এসিড এবং শর্করা  শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি যোগাতে এবং পানি ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ২০১৭ সালের আরেকটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে ডাবের পানিতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বকে ব্রণ হওয়া থেকে রক্ষা করে । নির্দিষ্ট করে বলা যায় যে ডাবের পানি ত্বককে উজ্জ্বল করে, কালো দাগ দূর করে, বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে, কোলাজেন তৈরি করে এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা কর। ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত  জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা 

একজন নারী যখন গর্ভবতী হন তখন তার এবং তার সন্তানের অনেক কিছু প্রয়োজন হয়। ডাবের পানি অনেক উপকার দেয় মা ও সন্তান দুজনকে। গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি মায়ের শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে,পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি ভ্রুণটি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, আবার সরকারের পরিমাণ কম থাকে বলে ওজন বাড়ায় না এবং  এই সময় গর্ভবতী নারীরা যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন  সেটি হতেও ডাবের পানি রক্ষা করে। 

হজমে সহায়তা   

গরমে শরীর অনেক বেশি ঘেমে যায় যার কারণে শরীর আর্দ্রতা হারায়। ডাবের পানি খেলে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং হজমেও সহায়তা কর। 

উপরে উল্লেখিত দিকগুলি  ছাড়াও ডাবের পানির উপকারিতা রয়েছে অনেক সেগুলি হল:

  • ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম রয়েছে ফলে এটি প্রাকৃতিক ভাবে শরীরে ক্যালসিয়ামের যোগান দেয় 
  • শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে ডাবে  থাকা আঁশ। 
  • শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করতে ডাবের পানি সহায়ক। 
  • অন্য যে কোন কমল পানির থেকে ডাবের চিনির পরিমাণ ও ক্যালরি  কম থাকে। 
  • এতে উপস্থিত আঁশের জন্য হজমেও সহায়তা করে। 
  • ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম ডাবের পানিতে রয়েছে তাই এটি কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

ডাবের পানি খাওয়ার মাধ্যমে আমরা অসংখ্য উপকারিতা গুলি লাভ করতে পারি। আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ ও হাইড্রেট রাখতে ডাবের পানির উপকারিতা অপূরণীয়। 

ডাবের পানি উপকারিতা ও অপকারিতা প্রত্যেকেরই জানা উচিত। কারা ডাবের পানি খাবেন আর কারা খাবেন না বিষয়টি  পর্যালোচনার দাবিদার

গরমে ডাবের পানির তুলনা আর কোন কিছুর সাথেই হবে না। এতে এমন সব পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আপনার শরীরের ঘাটতি দূর করতে সহায়তা করবে। তবে ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে।  ডাবের পানিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সোডিয়াম ক্লোরাইড এছাড়াও রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম।  বমি হলে আমাদের শরীর থেকে উনি উপাদান বের হয়ে পড়ে ফলে ডাব খেলে সে ঘাটতিটা পূরণ হয়ে যায়। তাই বমি, পাতলা পায়খানা অথবা গরমে বেশ ক্লান্ত লাগলে ডাবের পানি সেরা পানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

এতে যে পরিমাণে পটাশিয়াম আছে তাতে  পটাশিয়াম ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স রোগীর জন্য খুবই উপকারী ভূমিকা রাখে। 

পুষ্টিবিদ ফাতেমা আক্তার বলেন যে, ডাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ লবণ রয়েছে যার ফলে যেকোনো বয়সের মানুষ এটি খেতে পারে। ডাবের পটাশিয়াম থাকার জন্য এর পানি খাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকে। পুষ্টিবিদ ফাতেমা আক্তার আরও বলেন যে, অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিসের রোগীরা ডাবের পানি খেতে পারবে না কিন্তু এটি সত্য নয়। ডাবের পানিতে কোলেস্টেরল না থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে এটি খেতে পারেন। 

ডাবের পানির অপকারিতা 

ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। প্রতিটি বিষয়ের কিছু ভালো দিক আবার কিছু মন্দ দিকও রয়েছ। ডাবের পানিও এর ব্যতিক্রম নয়। নিচে ডাবের পানির অপকারিতা গুলি আলোচনা করা হলো-

  • ডাবের পানিতে উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম রয়েছে যার কারণে কিডনি রোগী বা যারা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছেন, যাদের ডায়ালাইসিস চলছে এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে ডাবের পানি গ্রহণ করা যাবে না। কারণ এতে থাকা পটাশিয়াম কিডনি নেফ্রাইটিস এর উপর পটাশিয়াম জমা হয়ে আরো চাপ বাড়বে। যার ফলে শরীর হতে বর্জ্য পদার্থ গুলি নিষ্কাশনে বাধা প্রাপ্ত হবে।
  • অতিরিক্ত ডাবের পানি খাওয়ার কারণে কারো ডায়রিয়াও হয়ে যেতে পারে।
  • যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডাবের পানি খাবেন কারণ এতে সর্দি বা ঠান্ডার রোগ আছে। 

শিশুদের কি ডাবের পানি খেতে দেন 

শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত তাদের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে বিশেষজ্ঞগণ ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ শিশুরা ভারী খবার খাওয়ার পর হতে ডাবের পানি হজম করতে সক্ষম হয়। শিশুদের যে কারণে ডাবের পানি খাওয়াতে পারেন-

  • বিভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়তে, ফ্লু ও ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে এবং অন্যান্য রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে। 
  • পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন পেট ফাঁপা আলসার কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় ডাবের পানি সাহায্য করে। 
  • গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যা হতে বাঁচাতে সহায়তা করে। 
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ এর জন্য চিকিৎসা দিয়ে থাকে 
  • কিডনির পাথর দ্রবীভূত করতে সহায়তা করে
  • অতিরিক্ত গরমে ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা হয়ে থাকে। ডাবের পানি শিশুদের শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করে থাকে। 

শিশুকে কিভাবে ডাবের পানি খাওয়াবেন? 

  • শীতকালে শিশুকে ডাবের পানি খাওয়াবেন না। 
  • অবশ্যই ফ্রেশ ডাবের পানি খাওয়াবেন। 
  • শিশুর যদি বাদাম বা ফলে অ্যালার্জি থেকে থাকে তবে ডাবের পানি খাওয়া থেকে বিরত রাখবেন। 
  • অবশ্যই ডাবের পানি একসাথে পান করাবেন না বরং একটু করে খাওয়াবেন।

ডাবের পানি যে সব রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে

তৃষ্ণা মেটাতে অনেকে ডাবের পানি পান করে থাকে। ডাবের পানির উপকারিতাও অপকারিতা সবারই জানা। শুধু গরমকালে নয় বরং  নিয়ম করে ডাবের পানি খেতে পারেন তাহলে একাধিক রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। ডাবের পানি শুধু আপনার পানীয় হিসেবে নয় বরং ওষুধ হিসেবে আপনার শরীরের কাজ করবে। ডাবের পানি নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ওজন কমবে, ব্লাড  সুগার নিয়ন্ত্রণ থাকবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, শরীরে পানির ঘাটতি  দূর হবে, হার্টের টনি হিসেবে কাজ করবে, মাথা যন্ত্রণা দূর হবে, তোকে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়া হতে বাধা দেবে, স্ট্রেস কমাবে এবং কিডনির ফাংশন এর উন্নতি করবে।

উপসংহার | ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

ডাবের পানিতে রয়েছে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ডাবের পানির কিছু অপকারিতা থাকলেও এর উপকারিতা অনেক বেশি বড় পরিমাণে রয়েছে। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলির মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং দেহের সুস্থতার তাইতো বৃদ্ধি পায়।   আজকের এই আর্টিকেলে  আমরা ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি আজকের পর থেকে এই বিষয় নিয়ে আর কোন সংশয় থাকবে না এবং আপনারা অপকারী দিকগুলো জেনে ডাবের পানি পান করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন  | ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

১. ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো? 

উত্তর: পুষ্টিবিদদের মত অনুযায়ী সকালবেলা খালি পেটে পানি পান করা উত্তম তবে শুধু পানি পান না করে এর পরিবর্তে ডাবের পানি খেতে পারলে সেটি বেশি উপকার হবে। সকাল সকাল আপনার শরীর স্বতঃস্ফূর্ত হবে এবং সতেজোতা বয়ে আনবে। 

২. ডাবের পানি সংরক্ষণের উপায়? 

উত্তর: অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে যে ডাবের পানি সংরক্ষণ করা যায় না। আবার অনেকেই ভাবেন মাত্র ৬ ঘন্টা ডাবের পানি সংরক্ষণ করা যায়। তবে সঠিক হলো ডাবের পানির উপকারিতা পেতে  চাইলে দুই থেকে তিন দিন ডাবের পানি ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারবেন কেননা অনেক সময় বাজারে বারবার যেতে বিরক্ত লাগতে পারে আবার ডাবের অপ্রতুলতাও থাকতে পারে। 

৩. টানা ৭ দিন ডাবের পানি খেলে কি হয়? 

উত্তর: ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক রয়েছে তবে তুলনামূলকভাবে অবশ্যই উপকারিতা অনেক বেশি। ডাবের পানি হজম হতে সহায়তা করে, নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, ইউরিন ইনফেকশন সংক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করতে পারবে ইত্যাদি। 

৪. ডাব খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে? 

উত্তর: অনেকে এই ভুল ধারণায় বিশ্বাসী যে ডাব খেলে ডায়াবেটিস বাড়বে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। কারণ ডাবের পানিতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একেবারে আদর্শ পানীয়। এছাড়াও ডাবের পানি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় না বরং নিয়ন্ত্রণে

Read More

Related Posts
এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম | এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়
এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

এলার্জি রোগের ইংরেজি নাম হল হাইপারসেনসিটিভিটি। এলার্জি রোগীদের অতি সংবেদনশীলতার রোগী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। যে ব্যক্তি যে ধরনের এলার্জি Read more

রক্তে এলার্জির লক্ষণ
রক্তে এলার্জির লক্ষণ

রক্তে এলার্জি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার Read more

ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায়
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায়

নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের মুখে ব্রণ একটি কমন সমস্যা। পুরুষরা বেশিরভাগ সময়ে ঘরের বাইরে অবস্থান করেন। বাইরে ধুলাবালি মুখে ব্রণ তৈরি Read more

বদহজম দূর করার উপায়
বদহজম দূর করার উপায়

বদহজম খুবই স্বাভাবিক এবং প্রচলিত একটি সমস্যা। বদহজমের সমস্যা হয় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। কমবেশি সবাই এই Read more

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা রসুনে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। বিভিন্ন ভিটামিন থেকে শুরু করে বায়োএকটিভ যৌগ যা মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য Read more

রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা

রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম হল সিজিজিওমোরোমেটাম। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ গাছে Read more

Leave a Comment